মহাকাশ থেকে রহস্যজনক রেডিও সিগন্যাল আসছে। উত্তর আমেরিকায় দুটি স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে গত ২৮ এপ্রিল এই সিগন্যাল শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের গ্যালাক্সির অন্য প্রান্তের একটি ম্যাগনেটার থেকে ভেসে আসছে রহস্যময় এই সিগন্যাল।
Advertisement
ম্যাগনেটার স্টার হলো এক ধরনের নিউট্রন তারকা যার শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র থেকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন এক্স-রে ও গামা রশ্মি নির্গত হয়।
বিজ্ঞানীরা এই সিগন্যালকে বলছেন ফাস্ট রেডিও বার্স্ট বা এফআরবি। এ ধরনের সিগন্যাল সাধারণত মিলি সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং একবার শোনার পর আর পুনরাবৃত্তি হয় না।
এর আগে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে যেসব এফআরবি ভেসে এসেছে, সেগুলো গ্যালাক্সির বাইরে থেকে আসত বলে জ্যাতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন। তবে এই প্রথম বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, আমাদের গ্যালাক্সির একটি ম্যাগনেটার থেকে ভেসে আসছে রহস্যময় এই সিগন্যাল। এতে করে এফআরবি রহস্যের জট খোলা সহজ হবে বলে মনে করছেন তারা।
Advertisement
সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত তিনটি গবেষণাপত্র ব্রিটিশ বিজ্ঞানবিষয়ক সাপ্তাহিক নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রের সহ-লেখক এবং কানাডার ম্যাকগিল ইউনির্ভাসিটির পদার্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পিএইচডি গবেষক প্রাজ্ঞ চাওলা।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি, অন্য গ্যালাক্সি থেকে যে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও তরঙ্গ ভেসে আসছে তার সঙ্গে কিছু এফআরবির সাদৃশ্য রয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কিছু এফআরবির উৎপত্তিস্থল ম্যাগনেটারগুলো।’
এফআরবির ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। কোটি কোটি বছর আগে থেকে এই ঘটনা ঘটে আসছে। কিন্তু এই ফাস্ট রেডিও বার্স্ট সম্পর্কে মানুষ প্রথম জানতে পারে ২০০৭ সালে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক ডজনবার শোনা গেছে এমন সিগন্যাল।
Advertisement
২০১৯ সালের জুনে বিজ্ঞানীরা জানান, তারা একটি এফআরবি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যার উৎপত্তিস্থল গ্যালাক্সি।
সম্প্রতি কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইন্টেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্টের (চাইম) ফাস্ট রেডিও বার্স্ট (এফআরবি) প্রজেক্টে কর্মরত বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, পৃথিবী থেকে ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ক্রমাগত বার্স্ট (রেডিও সিগন্যালের ধারা) আসছে।
পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে প্রাণী আছে কি-না, তা নিয়ে আজও বিজ্ঞানীদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে এলিয়েনের কথা প্রায়ই শোনা যায়। যদিও এর সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ভিনগ্রহের প্রাণীদের ব্যবহার করা কোনো প্রযুক্তির জন্যই এমন রেডিও সিগন্যাল তৈরি হচ্ছে। আর সেই সিগনাল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে থেকে আসাও অসম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন তারা।
সূত্র : দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
এসআর/পিআর