বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বহির্বিভাগ ভবনের পঞ্চম তলায় চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের কক্ষের বাইরে রোগীদের দীর্ঘলাইন। সবাই নির্দিষ্ট দূরত্ব তো মানেইনি, বরং গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালের স্টাফ ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের পরিচয়ে সিরিয়াল ভেঙে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করা নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর হৈ চৈ করছেন রোগীরা।
Advertisement
শুধু পঞ্চম তলাতেই নয়, আন্ডারগ্রাউন্ডে ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি ও নিচতলার টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় এবং গায়ের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
আজিমপুরের বাসিন্দা গৃহবধূ আসমা আক্তার মেয়ের চর্ম রোগের চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীরা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। সবাই যেভাবে মাস্ক খুলে কথাবার্তা বলছেন, তাতে হাসপাতালে রোগের চিকিৎসা নিতে এসে আবার করোনা না ধরে!’
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বার বার মুখে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
Advertisement
‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ (মাস্ক নেই তো সেবা নেই) নীতি অনুসরণের কথা বললেও হাসপাতালসহ বিভিন্ন পরিবহন, মার্কেট ও শপিংমলের বেশিরভাগ স্থানের কোথাও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে না কেউ। এসব স্থানে আগতদের কেউ কেউ মাস্ক পরিধান করলেও সঠিক নিয়মে পরিধান করছেন না। যখন তখন খুলছেন, আবার থুতনির নিচে নামিয়ে রাখছেন। সরকারি অফিস-আদালতের সর্বত্র মাস্ক না পরলেও সেবা মিলছে।
পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুখে মাস্ক পরিধান, কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রবণতা কমছে। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকির কথা যেন ভুলেই গেছে।
কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারে আগত ক্রেতাদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মুখে মাস্ক নেই। বিক্রেতারা যেন ভুলেই গেছে মাস্ক পরার কথা। হাসপাতালের মতো সেখানেও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণের শুরুতে ওয়াসাসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে পানির ড্রাম, বেসিন ও সাবানের ব্যবস্থা থাকলেও এখন তা নেই। মার্কেটগুলোতে আগে প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক টানেল দিয়ে প্রবেশ করতে হতো। সেই সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হতো। কিন্তু এখন সেসব কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
Advertisement
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে শুধুমাত্র নির্দেশনা, কিংবা আইন প্রয়োগ করে করা যাবে না। এ ব্যাপারে কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে। করোনার উপসর্গ হলে পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। অসহায়-গরিবদের জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সেকেন্ডে ওয়েভে বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছে। আমাদের দেশেও এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ আগের তুলনায় কম থাকলেও, যেকোনো সময় সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে বড় মাশুল দিতে হতে পারে।
উল্লেখ্য, দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয় এর ১০ দিন পর। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) পর্যন্ত সারাদেশে মোট চার লাখ ১৬ হাজার ৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ২১ জনের।
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস