করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২১ সালে সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে অভিভাবকদের মনে। বড় দুই পাবলিক পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় ঝুঁকি এড়িয়ে নিয়মিত পদ্ধতিতে ভর্তি করা হবে, নাকি লটারির মাধ্যমে ভর্তি হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সন্তান ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে কি না সে বিষয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
Advertisement
রাজধানীর একাধিক অভিভাবক জানান, সাধারণত প্রতি বছর এই সময় ভর্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞপ্তি দেয়া শুরু করে। কিন্তু চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রস্তুতি নেয়নি নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নভেম্বরেই ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়। সেটাও এখনও দেয়া হয়নি।
ফলে কবে নাগাদ বিজ্ঞপ্তি আসবে, কবে তারা প্রস্তুতি নেবেন এবং ঝুঁকি এড়িয়ে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে অথবা ভর্তি পরীক্ষা না নেয়া হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভালো স্কুলে ভর্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারে কি না এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাজ করছে তাদের মনে।
অভিভাবকরা বলেন, সরকার যে পদ্ধতিতেই ভর্তি করুক, তাতে যেন মেধাবীরা পিছিয়ে না পড়ে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেন আক্রান্ত না হয় সেসব বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
Advertisement
রাজধানীর প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সভা করে আগামী বছর কোন পদ্ধতিতে ঝুঁকি এড়িয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যায় সে সংক্রান্ত পরামর্শ চাওয়া হয়। এতে সশরীরে পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি পরামর্শ দেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অন্যান্য বছর সবার আগে ভর্তি প্রক্রিয়া হাতে নিলেও এখন পর্যন্ত ভর্তি বিষয়ে গভর্নিং বডি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
স্কুল ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষের ক্লাস ওয়ানে ভর্তির জন্য লটারি করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। ভর্তির জন্য আবেদন ও লটারি শেষ করতে নভেম্বরের শুরুতেই বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এছাড়া দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়। জানুয়ারিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, ‘ভর্তির বিষয়ে এখনও সরকারি নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ২০২১ সালের আসন সংখ্যাও চূড়ান্ত হয়নি। অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে প্রস্তুতি নিতে। নির্দেশনা পেলে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
Advertisement
অধ্যাপক ফওজিয়া আরও বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভর্তি নিতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগে। করোনার কারণে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়া না গেলেও আমরা প্রস্তুত। শিগগিরই গভর্নিং বডিতে বিষয়টি তোলা হবে।’
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, ‘২০২১ সালের শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর নির্দেশনা দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি স্কুলে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে নীতিমালা সংশোধনের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ বছর তেমন কোনো পরিবর্তন আনা না হলেও কোন পদ্ধতিতে ১ম শ্রেণির ভর্তি লটারি এবং ২য় থেকে ৮ম শ্রেণির জন্য ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আগামী ১৫ নভেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হলে এ নীতিমালা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করা হবে।
অন্যদিকে রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে ৮ম শ্রেণির ভর্তি শুরু করতে ‘ভর্তি নীতিমালা-২০২১’ চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ কারণে রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধানদের নিয়ে সভা করেছে মাউশি। এতে ভর্তি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বিভিন্ন ধরনের মতামত তুলে ধরলেও প্রথম শ্রেণিতে লটারি ও ২য় থেকে ৮ম শ্রেণিতে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির মতামত দিয়েছে। সেসব প্রস্তাব মাউশি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সেটি অনুমোদন দিলে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে আগামী বছরের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়ে আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময় অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
এমএইচএম/এসএস/এমকেএইচ