ফিচার

অতিথি পাখিরা এখন স্থায়ী বাসিন্দা

সবুজে ঘেরা, ছায়া সুনিবিড় গ্রাম খাগড়কুড়ি। এখন পাখি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। একসময় পাখিরা অতিথি হলেও এখন তারা স্থায়ী বাসিন্দা। গত ৮-১০ বছর আগে থেকে পাখিদের বিচরণ শুরু হয়েছে। প্রতিবছর তাদের আসা-যাওয়া থাকলেও এবার তারা বাসা বেঁধে সংসার পেতেছে গাছে। ডিম পেড়ে বাচ্চা দিয়েছে। মনের সুখে নিশ্চিন্তে সংসার করছে।

Advertisement

সকাল-বিকেল তাদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকে গ্রামটি। সূর্য ওঠার পরপরই তারা আহারে বেরিয়ে যায়। আবার ফিরে আসে বিকেল নাগাদ। প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা পাখিদের কিচির-মিচির উপভোগ করতে গ্রামটিতে বেড়াতে আসেন।

নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পূর্ব দিকে গ্রামটির নাম খাগড়কুড়ি দক্ষিণ পাড়া। গ্রামটি খাগড়কুড়ি হলেও হাতিপোতা নামেও পরিচিত। জমিদারী আমলে হাতি নিয়ে খাজনা আদায় করতে এসে হাতিটি মারা যায়। এরপর হাতিটি এ গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় মাটিতে পুতে রাখা হয়। এ কারণে হাতিপোতা হিসেবেও এলাকাটি পরিচিত।

গ্রামের আক্তার ফারুক নামে এক ব্যক্তির বাগানে শিমুল, আম, কড়ই ও বাঁশঝাড় রয়েছে। গত ৮-১০ বছর আগে থেকে তার বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিচরণ শুরু হয়। সেখানে গড়ে ওঠে পাখি কলোনী। আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের মধ্যে শামুকখোল, সাদা বক, রাতচোরা, পানকৌড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু।

Advertisement

নিরাপদ মনে করে প্রতিবছরের নির্দিষ্ট সময়ে আসে এবং শীতের সময় চলে যায়। তবে কিছু অংশ সারাবছরই থাকে। এবছর পাখিরা গাছে বাসা বেঁধে সংসার পেতেছে। ডিম পেড়ে বাচ্চা দিয়েছে। সব সময় কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে আছে গ্রামটি। গ্রামের মানুষও এখন পাখিপ্রেমী হয়ে গেছে। তারা পাখিদের বিরক্ত করে না। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন গ্রামের সবাই।

এ ছাড়া কাউকে বিরক্ত এবং শিকার করতে দেয় না। পাখি শিকার রোধে গ্রামবাসী নিয়েছে নানা উদ্যোগ। ফলে সারাবছরই সেখানে হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটে। গ্রামে প্রবেশে আগে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, ‘পাখি কলোনীসমূহ দেশের সম্পদ, এদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের।’

স্থানীয় গৃহবধূ লিমা ও নাজমা বলেন, ‘এরা অতিথি পাখি হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। গরমের সময় আসে। আর শীতের মৌসুমে অধিকাংশ পাখি চলে যায়। তবে প্রতিবারের মতো এবার কোনো পাখি চলে যায়নি। গাছে অসংখ্য বাসা বেঁধে বাচ্চা দিয়েছে। ভোর থেকে সকাল এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকে।’

তারা বলেন, ‘সূর্য ওঠার পরপরই তারা আহারে বেরিয়ে যায়, আবার ফিরে আসে বিকেল নাগাদ। তারা যে শামুক খেয়ে খোল ফেলে দেয়; নিচে থাকা হাঁস সেগুলো খেয়ে নেয়। বলতে গেলে পাখির ডাকে ভোর হয় এবং ঘুম ভাঙে। প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত হলেও এখন ঠিক হয়ে গেছে।’

Advertisement

মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন বিষয়টি উপভোগ করি। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন পাখি দেখতে আসে। তবে এলাকাটি শহরের কাছে হওয়ায় একটু প্রশান্তি পেতে শহরের মানুষ বেশি আসে। আমরা পাখি শিকার রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।’

আব্বাস আলী/এসইউ/জেআইএম