আয়েশা আক্তারের জন্ম শ্রীমঙ্গলের চা বাগান এলাকায়। বাবা ছিলেন চা বাগানের কর্মকর্তা। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে আয়েশা সবার ছোট। এসএসসি পাসের পর ১৯৯৪ সালে চা বাগানের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আয়েশার বিয়ে হয়। সংসার, ছেলে-মেয়ে নিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। তবুও স্বপ্ন দেখেছেন সফল হওয়ার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত-
Advertisement
আয়েশার অবসর সময় কাটে শখের কাজ সুঁই-সুতা দিয়ে কাপড়ে বাহারি ডিজাইন করে। ছেলে-মেয়েসহ নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। এভাবেই স্বামী-সংসার সামলে সুখেই দিন কাটছিল তার। কিন্তু ২০১৭ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখে হঠাৎ তার স্বামী স্ট্রোক করে মারা যান। তখন তিনি অনুভব করেন, বাকি জীবন চলার জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।
তখন থেকেই শুরু হয় আয়েশার সংগ্রামী জীবন। তার শখের কাজ সেলাইকে অবলম্বন করে শুরু হয় পথচলা। সেই সঙ্গে সামান্য পুঁজিতে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। দুজন নারী কর্মচারীকে নিয়ে দেন একটি টেইলার্স। নিজের তৈরি কারুকাজ করা কাপড় ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন পেজ ‘রঙিলার’ মাধ্যমে বিক্রি করতে থাকেন।
এভাবে চলতে থাকে একবছর। তারপর বাসার কাছেই একটি কাপড়ের শো-রুম দেন। তবে অনলাইন থেকে অফলাইনেই আয়েশার কাপড় বেশি বিক্রি হতে থাকে। এর বেশ কিছুদিন পর ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ ‘উই’তে যুক্ত হন তিনি।
Advertisement
এ ব্যাপারে আয়েশা বলেন, ‘উইতে দেশীয় পণ্যের এমন সুন্দর প্লাটফর্ম দেখে অনেক ভালো লাগে। সত্যি বলতে, এ গ্রুপে যুক্ত হই ক্রেতা হিসেবে। কারণ নিজে ভালো কিছু কেনাকাটা করবো এটাই ছিল উদ্দেশ্য। আস্তে আস্তে সবার পোস্ট দেখে গ্রুপকে বোঝার চেষ্টা করি। পাশাপাশি নিজেরও কিছু করার ইচ্ছে জাগে। ৩ মাস পর উইয়ের অনলাইন আড্ডায় যুক্ত হই। এতে মনে হয়, আমি কিছু একটা করতে পারবো।’
ফলে গ্রুপের মডারেটর নিগার ফাতেমার দেশীয় পণ্যের সিলেবাস দেখে সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নিজের এলাকার এমন পণ্য নিয়ে কাজ করবেন, যা ঐতিহ্য বহন করে। তারপর ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদের পরামর্শে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শীতলপাটি নিয়ে কাজ শুরু করেন।
তবে কাজের শুরুটা ছিল বেশ কঠিন। কারণ করোনায় দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। তারপর পণ্যটি ছিল বিলুপ্তির পথে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত আয়েশার প্রায় ৪ লাখ টাকার অর্ডার আসে অনলাইনে। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাসে তার শীতলপাটি ও শীতলপাটি দিয়ে তৈরি ফিউশনের পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।
এতে অনেক উদ্যোক্তাই শীতলপাটি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন। তিনি শীতলপাটি দিয়ে টেবিল ম্যাট, স্যান্ডেল, টিস্যুবক্স, ওয়ালমেট, ব্যাগ, পার্স, পেনহোল্ডার, গয়নাসহ অনেক আইটেম তৈরি করে বিক্রি করেন। আমেরিকার শিকাগো ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকেও তার শীতলপাটির অর্ডার এসেছে। খুব তাড়াতাড়িই তিনি সেসবের ডেলিভারি দেবেন।
Advertisement
আয়েশা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য ছিল হারিয়ে যাওয়া এ পণ্যকে সবার মাঝে ফিরিয়ে আনা। ইনশাআল্লাহ, আমি তা পেরেছি। গ্রুপ থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। সব চেয়ে বড় অর্জন হলো, আমাকে উই থেকে লোকাল প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমার স্বপ্ন শীতলপাটি শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও জনপ্রিয় করে তোলা।’
লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/জেআইএম