আন্তর্জাতিক

আরব দেশগুলো ঋণের দায়ে জর্জরিত

করোনায় পর্যটকরা হয়তো মিসরের সমুদ্র সৈকত আর ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোতে ফিরে আসেনি, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা ঠিকই ফিরে এসেছে। তারা ঋণ দিচ্ছে। করোনা মহামারির প্রথম দিন থেকেই বিক্রি বন্ধ। মে থেকে স্থানীয় ঋণের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার। বিদেশিরা যে আসা বন্ধ করে দিয়েছে এটাও এর বড় কারণ।

Advertisement

শুধু মিসর নয় গোটা আরব বিশ্বের অবস্থা এই। বছরের প্রথম দশ মাসে জিসিসিভূক্ত ছয় দেশের ঋণের পরিমাণ রেকর্ড একশো বিলিয়ন ডলার। ট্রেজারিগুলো স্থানীয় বিনিয়োগকারীদেরও উৎসাহী করে তুললেও সর্বদা তা সফলভাবে হচ্ছে না। যেমন, তিউনিসিয়া সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ট্রেজারি বন্ড কিনতে বলেও সফল হয়নি।

অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঋণ নিচ্ছে আরব দেশগুলো। এমনকি করোনার প্রকোপ শুরু আগেও তেলের মূল্য হ্রাস ও মন্থর অর্থনীতির গতি ফেরাতে নতুন নতুন ঋণ নিচ্ছিল অনেক দেশ। মহামারি শুধু এর প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এসব দেশের মধ্যে অনেকগুলোর ঋণের পরিমাণ হবে গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অঞ্চলটির ১১টি তেল ও গ্যাস রফতানিকারক দেশের জিডিপির ২৫ শতাংশ ছিল ঋণ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিচ্ছে, আগামী বছর এ অনুপাত হবে ৪৭ শতাংশ। জ্বালানি সম্পদ নেই এমন দেশে এই হার কম, কারণ এগুলো আগে থেকেই বিশ্বের সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত দেশ।

Advertisement

তবে এটা যে সব সময় উদ্বেগের কারণ এমনটাও নয়। আগামী বছর সৌদি আরবের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ঋণের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালে ছিল ১৭ শতাংশ। আগামী বছর ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে কুয়েতের হবে ৩৭ শতাংশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৮।

যদিও নিখুঁত হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যাগুলো কম। উল্লিখিত এই তিন আরব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অবস্থান বেশ ভালো অথবা এগুলোর প্রয়োজনীয় সার্বভৌম-সম্পদ তহবিলও রয়েছে। মূলধনও সস্তা; ৩৫ বছর মেয়াদের সৌদি ইউরোবন্ডের অংশ বিশেষ ইস্যু হয়েছে জানুয়ারিতে। যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাকি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর অবস্থা নড়বড়ে। ২০২১ সালে বাহরাইনের জিডিপিতে ঋণ ১৩১ শতাংশ বাড়বে। ২০০০-১৬ সালে গড়ে ৩৪ যা শতাংশ। ওমানের ঋণ সাতগুণ বেড়ে হবে ৮৯ শতাংশ। দেশ দুটি বছরের শুরুতে বন্ড বাজার প্রায় বন্ধ করে দেয়। ইউরোপে নতুন করে লকডাউন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রমণ বাড়ায় অক্টোবরে মূল্যহ্রাস করায় তেলের বাজার অবশ্য দেশ দুটির বাজেটে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার তৈরি হয়েছে।

মহামারি অঞ্চলটির বহু বছরের আর্থিক সংস্কার কার্যক্রম আটকে দিয়েছে। ২০১৬ সালে আইএমএফের সঙ্গে ১২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল মিসর। ভর্তুকি ছাঁটাই ও নতুন একটি মূল্য সংযোজন শুল্ক প্রবর্তনের লক্ষ্য ছিল। এতে করে ২০১৬ সালের দেশটির ঘাটতি ১১ শতাংশ থেকে গত বছর দাঁড়ায় ৭ শতাংশে।

Advertisement

২০২১ সালে জিডিপিতে ঋণের অনুপাত ৭৯ শতাংশে কমিয়ে আনার পথে ছিল মিসর। কিন্তু ৫২০ কোটি ডলারের স্ট্যান্ডবাই চুক্তি আইএমএফকে ফেরত পাঠাতে হয়েছে। আগামী বছর জিডিপিতে ঋণের পরিমাণ ৯১ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। এদিকে জর্ডানে হবে ৮৯ ও তিউনিসিয়ায় ৮৬ শতাংশ।

আপাত সংকট মোকাবিলা হলেও ঋণ রয়েছে নানামুখী সমস্যা। আগামী বছরও তেলের দাম কম থাকবে বলেই পূর্বাভাস। পর্যটন ছাড়াও অর্থনীতির বড় খাতগুলোতে গতি ফিরলেও তা হবে খুব ধীরে। অতিরিক্ত এই ঋণের বোঝা নিয়ে আরব সরকারগুলো অর্থনীতিকে কতটা সচল করতে পারবে তাই এখন দেখার।

এসএ/পিআর