কৃষি ও প্রকৃতি

ড্রাগন ও মালটা চাষে ২ লাখ টাকা আয়

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে স্থানীয় পর্যায়ে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে উচ্চমূল্যের মিশ্র ফলের বাগান করে লাভবান হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার কৃষক মো. আব্দুল গফুর কাজী। তিনি শহীদ ওহাবপুর ইউপির রূপগ্রামের বাসিন্দা।

Advertisement

এ অঞ্চলে ড্রাগন ও মালটার নতুন চাষাবাদ শুরু হলেও ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তিনি। এ মৌসুমে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেছেন ড্রাগন ও মালটা বিক্রি করে।

এতে খরচ হয়ে নামমাত্র টাকা, যা ছত্রাকনাশক ওষুধ ও পরিচর্যায়। তবে ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে কয়েকগুণ লাভ ড্রাগন ও মালটা চাষে এবং কষ্টও কম। এছাড়া এসব বাগানের মধ্যে করা যায় সাথী ফসল হিসেবে শাক-সবজির চাষ, যা থেকে বাড়তি আয় করা যায়।

জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ২০১৭ সালে প্রায় দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন ও ২০১৮ সালের বারী-১ মালটা চাষ শুরু করেন সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর।

Advertisement

তিনি ভিয়েতনামি নারিকেল ও বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ব্রকোলি, পেঁপেসহ শাক-সবজির চাষ করছেন। বর্তমানে বাগানে ৬৬টি ড্রাগন ও ৬০টি মালটা গাছ রয়েছে।

ড্রাগন ১৮ থেকে ২৪ মাসের ব্যবধানে ফল পাওয়া যায় এবং দুই বছর পর থেকে পাওয়া যায় মালটার ফলন। বাগান শুরুর সময় যে খরচ করেছেন, মূলত সেটাই। পরবর্তীতে খরচ হয় পরিচর্যা ও ছত্রাকনাশক ওষুধে। সাথী ফসল থেকে উঠে আসে পুরো বাগান পরিচর্যা ও ছত্রাকনাশক ওষুধের খরচ।

চলতি মৌসুমে ড্রাগনের ৪০টি পিলার থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ড্রাগন ও ৬০টি মালটা গাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মালটা বিক্রি করেছেন কৃষক গফুর। এছাড়া ভিয়েতনামি নারকেল গাছে বাধা আসলেও ফল হয়নি।

ড্রাগন চাষে পিলারপ্রতি শুরুতে পাঁচশ টাকা ও মালটার চারাপ্রতি খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। স্থানীয় আলম ও মজিদ শেখ বলেন, আজ কয়েক বছর হয়েছে গফুর কাজী ড্রাগন ও মালটার বাগান করেছেন। বর্তমানে তিনি ড্রাগন ফল ও মালটা বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়েছেন।

Advertisement

সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছেন ড্রাগন। দূর-দূরান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে মানুষ এসব ফল কিনতে ও দেখতে আসে। অন্যান্য কৃষি ফসল চাষে অনেক কষ্ট কিন্তু এ ফল চাষে শুরুতে কষ্ট, পরে আর তেমন কষ্ট নেই এবং লাভও কয়েকগুণ বেশি। আগামীতে তারা তাদের কৃষিজমিতে ফলের বাগান করবেন। এসব ড্রাগন ফল ও মালটা সুস্বাদু।

কৃষক আব্দুল গফুর কাজী বলেন, তিনি একজন কৃষক এবং কৃষিকাজ করা তার পেশা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ফলের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে তিনি ড্রাগন, মালটা ও ভিয়েতনামি নারকেলের মিশ্র ফলের বাগান করছেন। খরচ যা হয়, সেটা প্রথমে। ড্রাগন চাষে প্রতিটি পিলারে তার চারাসহ খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে পাঁচশ টাকা।

পরবর্তীতে পরিচর্যা ও ছত্রাকনাশক ওষুধ ছাড়া কোনো খরচ নেই। দুই বছর পর থেকে ফলন পেতে শুরু করেছেন এবং এখন পরিপূর্ণভাবে ৪০টি গাছের ফলন পাচ্ছেন এবং আরও নতুন ২৬টি গাছ লাগিয়েছেন। এখন বছরে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয় এবং নিজের তৈরি বার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করছেন বাগানে।

খরচ যা করার আগেই করেছেন, এখন শুধু ফল পাবেন এবং পিলারে গাছ যত বছর থাকবে তত বছরই ফলন পাবেন। এ মৌসুমে তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছেন। অপরদিকে মালটা চাষের খরচও সীমিত। ৪০ থেকে ৪৫ টাকা পিস চারা কিনে লাগিয়েছেন। ভিয়েতনামি নারিকেলের চারা প্রতি পিস কিনেছেন পাঁচশ টাকায়।

এর মধ্যে তিনি সাথী ফসলও চাষ করছেন। যা থেকে পরিচর্যা খরচ উঠে বাড়তি লাভ করছেন। মালটা বাগানে তার প্রায় ৭০টি গাছ আছে। এ বছর সেখান থেকে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকার মালটা বিক্রি করেছেন। আসা করছেন আগামীতে মালটার ফলন আরও বেশি পাবেন।

এছাড়া নারকেল গাছে বাঁধা আসছে কিন্তু ফল ধরেনি। আশা করছেন আগামী বছর নারকেল গাছ থেকেও ফলন হবে। এসব ফল চাষ করে তিনি ব্যাপক লাভবান এবং অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফল চাষে ৮ থেকে ১০ গুণ লাভ। আগামীতে তিনি ফলের চাষ আরও বাড়াবেন এবং ফল বাগানে তার এমন সাফল্য দেখে আশপাশের লোকজন বাগান করতে আগ্রহী হয়ে পরামর্শ চান।

শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু হুসাইন সজল বলেন, আধুনিক ফল চাষে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহ দেন। কি করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং পোকা-মাকড় ও ছত্রাক থেকে বাগানকে মুক্ত রাখা যায় সে পরামর্শ দেন। ফলে রূপপুরের কৃষক গফুর গাজী ড্রাগন ও মালটার বাগান করে লাভবান হয়েছেন।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. বাহাউদ্দিন শেখ বলেন, রাজবাড়ীতে ড্রাগন, মালটাসহ অন্যান্য যে আধুনিক ফল রয়েছে তার জন্য মাটি অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে ৬ হেক্টর জমিতে মালটা ও ৪ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের বাগান রয়েছে। এটি উচ্চমূল্যের ফসল এবং লাভজনক হওয়ায় ধীরে ধীরে এসবের আবাদ রাজবাড়ীতে বাড়ছে।

অনেকে এখন মিশ্রভাবে ফলের বাগান করে লাভবান হচ্ছেন। মালটা ও ড্রাগন চাষে তারা সব সময় সতর্ক অবস্থানে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেন। ড্রাগন ফল চাষে প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ বেশি হলেও পড়ে সুষম ও জৈব সার ছাড়া আর কোনো খরচ নেই।

এছাড়া ড্রাগন বাগানের মধ্যে অন্যান্য শাক-সবজির আবাদ করে বাড়তি আয় করা যায়। রাজবাড়ীর দো-আঁশ মাটি ড্রাগন ও মালটা চাষের জন্য উপযোগী। ফলে রাজবাড়ীতে কমলার আবাদও শুরু হয়েছে। আগামীতে কমলার ফলনও ভালো হবে।

রুবেলুর রহমান/এমএমএফ/পিআর