বিনোদন

ওয়াজের মধ্যে অনেক হুজুর ভুল তথ্য দেন, ঘৃণা ছড়ান : ফারুকী

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বেশ কিছু সিনেমা দিয়ে এরই মধ্যে তিনি ভিন্ন ঘরানায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশ-বিদেশে পেয়েছেন প্রশংসা। তাকে দেশের নানা ইস্যুতে দেখা যায় সরব থাকতে।

Advertisement

সম্প্রতি তিনি ওয়াজ মাহফিলের বিধি বিধান কী জানতে চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এটি মূলত সম্প্রতি লালমনিরহাটে ঘটে যাওয়া জুয়েল হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে স্ট্যাটাস। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য চিকিৎকসদের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়। সিনেমা মুক্তি দিতে হলে সেন্সর বোর্ডের অনুমতি নিতে হয়। ওয়াজ মাহফিল সমাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেললেও এ বিষয়ে কোনো বিধি বিধান কি আছে? তার এ স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়েছে।

গত ৩১ অক্টোবর ফারুকী স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একজন ডাক্তারকে চিকিৎসা করতে হইলে লাইসেন্স নিতে হয়! ভুল চিকিৎসা করলে তার বিচার হয়। এমনকি রাজনীতি করতে হইলেও নিবন্ধন করতে হয়! সিনেমা বানাইলে সেন্সর পাস করতে হয়! কিন্তু ওয়াজের ক্ষেত্রে বিধান কি? যে ওয়াজ করতেছে তার ধর্মীয় জ্ঞান, মানবিক বোধ এগুলা যাচাই করবে কে? সব হুজুরের এলেম বা মানবিক বোধ তো এক না!

ওয়াজের মধ্যে অনেক হুজুররে দেখতেছি ভুল তথ্য দেয়, জঘন্য ভাষায় ঘৃণা ছড়ায়, মিসোজিনি ছড়ায়, বিধর্মী বা তাদের দৃষ্টিতে ইসলামবিরোধীদের পারলে সেখানেই শেষ করে দেয়! কথা হইলো, এই রকম ওয়াজে মানুষ বিগড়াইলে তার বিধান কী?

Advertisement

একবার ভাবেন, যে ছেলেটা ওয়াজে যায় এটা ভেবে যে হুজুর যা বলতেছে সেটাই ঠিক, ও ওখান থেকে কি শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছে! তারপর সেই শিক্ষার আলো সে যখন সমাজে ছড়াবে তখন সেই সমাজের চেহারা তো লালমনিরহাটের নারকীয় ঘটনার মতোই হবে!’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আরেকটা কথা, এই যে কথায় কথায় কারো মৃত্যুদণ্ড চাওয়া, কাউরে কতল করতে চাওয়া এটা ফৌজদারি অপরাধ কিনা! ২০১০ এ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার রিলিজের পর যখন আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে মানববন্ধন করতেছিল একটা গ্রুপ (সম্ভবত হিজবুত তাহরীরের কিছু শিক্ষক এটার সাথে জড়িত ছিল) এবং দাবি করতেছিল আমার মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, তখন আমি এক ল’ইয়ার বন্ধুরে জিজ্ঞেস করছিলাম “এটা কি আমার বিরুদ্ধে ভয়োলেন্স ইনসাইট করা হচ্ছে না?” তখন সে আমারে বলছিল, “তুমি তো জানোই দোস্ত, দেশের নামে, ধর্মের নামে, জাতির নামে ভায়োলেন্স ইনসাইট করলে এটাকে বেশিরভাগ সময়ে মহৎ কাজ হিসেবে দেখা হয়।” আমার মনে হয়, লালমনিরহাটের ঘটনাকে আমরা একটা লাস্ট সিগন্যাল হিসেবে নিতে পারি সমাজটারে ঠিক করার। আমি মোটামুটি ফেয়ারলি ধার্মিক পরিবারে বড় হইছি! ফলে ওয়াজ মাহফিল প্রচুর শুনতে হইছে ছোটবেলায়! আমি মনে করতে পারতেছি না ওইসব ওয়াজ মাহফিলে আজকের মতো ঘৃণা, বিদ্বেষ, কতল করার আহ্বান শুনছি কিনা! রাষ্ট্রকে এগুলা বিবেচনায় নিতে হবে!

এবার সংশ্লিষ্ট আরেকটা বিষয়ে কথা বলতে চাই যাতে আমরা বুঝতে পারি আমরা আর কোথায় কোথায় ভুল করছি! আপনি যখন একজন অপরাধীর ক্রসফায়ার চাইবেন, তখন নিজের অজান্তেই মবরাজত্বের পক্ষে ভোট দিলেন যেখানে ভালো মানুষকেও ক্রসফায়ার দেয়া যাবে! মবরাজত্বে ক্রসফায়ার ভালো কাজ, অবিশ্বাসীকে খুন করা ভালো কাজ! আমরা সেই মবরাজের বাসিন্দা হইছি বেশ কিছুকাল ধরেই! এটার রাশ এখনই টানা জরুরি!

আর আমার লিবারেল বন্ধুদের ভাবতে বলবো, আমাদের কোন কোন ভুলে উগ্রবাদীদের লোক রিক্রুট সহজ হইছে, আমাদের কোন কোন অপ্রয়োজনীয় কাজ দিয়া আমরা তাদের শক্তিশালী করছি, সংগঠিত হইতে সাহায্য করছি! তার মানে বলতেছিনা, তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া উচিত! বরং আমি উল্টাটা বলতেছি! যখন তারা বলবে, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না! আমরা তাদের চ্যালেঞ্জ করবো এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পক্ষে কাজ করবো! তারা যখন বলবে, মেয়েরা চাকরি করতে পারবে না, আমরা তাদের চ্যালেঞ্জ করবো! অর্থাৎ যা কিছু আমাদের জাগতিক অগ্রগতির পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, তাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করবো! কিন্তু একই সাথে একটু প্রাগমাটিকও আমাদের বোধহয় হওয়া জরুরি! কোন যুদ্ধটা আমরা করবো আর কোনটা করবো না, কোন বল ব্যাটে খেলবো আর কোনটা ছেড়ে দেব, এইটা বোঝাটা মনে হয় আমাদের দরকার! আমাদের পিচটার বাস্তব অবস্থাও মাথায় রাখা দরকার! মনে রাখা দরকার সব পিচে একইরকম ভাবে ব্যাট করা যায় না!

Advertisement

লালমনিরহাটের ঘটনায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক! ভবিষ্যৎ লালমনিরহাট কাণ্ড থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাক! মবরাজ নিপাত যাক!’

এলএ/পিআর