বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগাম রবি শস্য চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর কৃষক। সরকারি সহযোগিতায় (প্রণোদনা) গম, সরিষা, ভুট্টা ও সার পাওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলায় রবি শষ্য চাষ শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় অধিক জমিতে রবি শস্য চাষ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে বন্যায় নওগাঁর রাণীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার ১৪ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে যায়। বন্যা কবিলত এলাকায় হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন তালিকা করে দ্রুত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি সহযোগিতা কার্যক্রম হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে এক কেজি সরিষা, ২০ কেজি গম, দুই কেজি ভুট্টার বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে বরি শস্য চাষ করা হয়েছে। তবে এ বছর এক লাখ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এক লাখ দশ হাজার হেক্টর জমিতে রবি শস্য চাষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত আলুর মৌসুমে চাষিরা আলু বিক্রি করতে না পেরে তাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গম, সরিষা, আলু, পিয়াজ, রসুন লাগাতে জেলার হাজার হাজার কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাণীনগর উপজেলার চকবলরাম গ্রামের জনি মন্ডল জানান, বন্যার পর র্দীঘ দিন (ইরি-বোর ধান চাষের জন্যে) পড়ে থাকত এ সকল জমি। তবে চলতি মৌসুমে সরকারি কৃষি প্রণোদনা পেয়ে যে পরিমাণ জমি চাষ করা যেতো তার চেয়ে এলাকায় বেশি জমিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আগাম রবি শস্য চাষ করছেন। ছয়বাড়িয়া গ্রামের অভিজিত সরকার জানান, ৮/১০ বছর আগে তাদের এলাকায় ব্যাপক সরিষা, গম, আলুসহ বিভিন্ন রবি শস্য চাষ করা হতো। কিন্তু এ অঞ্চলে ধান এক মাত্র ফসল হওয়ায় রবি শস্য কেউ চাষ করতেন না। কিন্তু বন্যায় এ বছর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা রবি শস্য চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তিনি সরকারি প্রণোদনায় এক বিঘার জন্য সরিষা বীজ ও সার পেয়েছেন। কিন্তু বন্যার কারণে তাদের সব জমিতে ধান না থাকায় আরো দেড় বিঘা সরিষা চাষ করেছেন। আগামীতেও যেন কৃষিতে প্রণোদনা দেয়া হয় সে দাবি জানান তিনি। আত্রাই উপজেলার বজ্রপুরগ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, গত বছর হিমাগারে আলুর বীজ রেখে ভালো মানের বীজ পেয়েছেন। এ জন্য ১২ বিঘা আলু লাগানো জন্য চাষ শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারবেন এমনটাই আশা ব্যক্ত করেন তিনি। আত্রাই উপজেলার আন্দারকোটা গ্রামের আজিজার রহমান ও সামছুল আলম জানান, চলতি রবি মৌসুমের শুরুতেই সরিষা, গমসহ অন্যান্য ফসলে পোকার আক্রমণ না দেখা দিলেও আলুতে দেখা দিয়েছে ল্যাদাপোকার আক্রমণ। আলুতে ল্যাদাপোকা দমন না করা গেলে কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবে না। এতে তাদের লোকসান গুণতে হবে।গৃহিণী মর্জিনা বেগম জানান, বাড়ির পুরুষ (স্বামী) মানুষ ভ্যান চালান। বাড়িতে পুরুষ না থাকায় সংসারের কাজের পাশাপাশি আলু, পিয়াজ, রসুন লাগিয়ে থাকেন। এতে বাড়তি আয় হয়। উপজেলার মিরাপুর গ্রামের মুমিন জানান, গত রবি ফসল ঘরে তোলার পর অনেক কৃষক তাদের ফসল বিক্রি করতে পারেনি রাজনৈতিক অরাজকতার কারণে। এতে আলু, ভুট্টায় তাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে এ বছর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো থাকায় অন্যান্য আবাদের পাশাপাশি আলু, ভুট্টায় ভালো লাভ আশা করা হচ্ছে।আন্দারকোটা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, আমজাদ আলী খানসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, জেলার অধিকাংশ কৃষকই রবি চাষে কৃষি বিভাগ থেকে কোনো পরামর্শ পান না। পরামর্শ দিলে কৃষকরা যেমন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারতো অন্যদিকে লাভবান হতো।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, কৃষি বিভাগ থেকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত থাকায় জেলায় এ বছর রবি শস্য গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে চাষ করা হচ্ছে। জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ হেক্টর থাকলেও এবার ধারণা করা হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে রবি শস্য চাষ করা হবে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় এমন দাবি করেন তিনি।আব্বাস আলী/এসএস/এমএস
Advertisement