চায়ের নিমন্ত্রণে ডেকে নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসদাচরণ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে মানবকণ্ঠের মালিক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষে দীপ আজাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। করোনার এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে মানবকণ্ঠ থেকে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের বকেয়া আদায়ের কর্মসূচি থেকে তাদের ডেকে নেয়া হয়।
Advertisement
বুধবার (২৮ অক্টোবর) আশিয়ান গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক মানবকণ্ঠ কার্যালয়ের পাশেই আশিয়ান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মানবকণ্ঠ কার্যালয়ের সামনে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ‘মানবকণ্ঠ সংগ্রাম পরিষদ’। ৬ থেকে ২০ মাসের বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ না করে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও কর্মচারীরা। কর্মসূচিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদসহ ডিইউজের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, কর্মসূচির একপর্যায়ে মালিকপক্ষ থেকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রেখে ডিইউজের নেতারা আশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কার্যালয়ে যান। কিন্তু সেখানে কোনো ‘আলোচনার সূত্রপাত না করে হঠাৎ নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও তার পালিত গুন্ডারা সাংবাদিক নেতাদের ওপর চড়াও হন’। অফিসের কর্মচারীরা তাকে নিবৃত করেন। এরপরও তিনি ‘অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালাগাল’ করেন। হাইকোর্টে ‘দেখা হবে’ বলেও হুমকি দেন। দেশের ‘কোনো শক্তিই তার কিছু করতে পারবে না’ বলে তিনি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় ডিইউজে নেতারা বের হয়ে এসে পুনরায় কর্মসূচিতে অংশ নেন।
Advertisement
মানববন্ধনে ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘আমরা মানবকণ্ঠের চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের বকেয়া আদায়ের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে এসেছি। এখানে কোনো মারামারি, হুমকি-ধমকি দিতে আসিনি। এসব আমাদের কাজ নয়। পাওনা পরিশোধ না করে উল্টা আমরা অশোভন আচরণের সম্মুখীন হয়েছি। অবিলম্বে পাওনা পরিশোধ করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর কাছে যাব।’
সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘মানবকণ্ঠ পত্রিকা অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। এর আগে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণের পাঁয়তারা করেছে। আজ আলোচনার কথা বলে ডেকে নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা হলো। বাংলাদেশের সব অর্জন আন্দোলনের মাধ্যমেই এসেছে। সাংবাদিকদের দাবিও আন্দোলনের মাধ্যমেই অর্জিত হবে। আমরা হামলা-মামলা মোকাবিলা করেই দাবি আদায় করে ছাড়ব।’
বিএফইউজে কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ বলেন, ‘আপনার অতীত-বর্তমান সব আমরা জানি। কোথা থেকে কীভাবে এই সাম্রাজ্য গড়েছেন, সাংবাদিকরা লেখা শুরু করলে সব তছনছ হয়ে যাবে। এখনও সময় আছে, ভালোয় ভালোয় সমস্যার সমাধান করুন। আপনি হাইকোর্টের ভয় দেখান, কয়টা কোর্ট চেনেন আপনি? লোয়ার কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট সব কোর্ট আমাদের চেনা। আমরাও আপনাকে দেখে নেব।’
ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল আলমের সঞ্চালনায় ও মানবকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক সাবিরা ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ডিইউজের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক দুলাল খান, প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সবুজ, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য জুবায়ের চৌধুরী, মানবকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক মহিউদ্দিন পলাশ প্রমুখ।
Advertisement
এ সময় আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন মানবকণ্ঠের সাবেক সম্পাদক মাহমুদ আনোয়ার। মানববন্ধনের শেষ পর্যায়ে মালিকপক্ষের এক প্রতিনিধি এসে দুঃখ প্রকাশ করে আবার আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন।
এইচএস/এফআর/পিআর