আন্তর্জাতিক

জিনজিয়াংয়ে ৪৭ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করবে চীন

আবারও গণহারে করোনা পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দেওয়া এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জিনজিয়াংয়ের কাশগার শহরের প্রায় ৪৭ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।

Advertisement

এর আগে দেশটির কিংদাও শহরের ৯০ লাখ মানুষের সবার করোনা পরীক্ষা করেছে কর্তৃপক্ষ। পাঁচদিনের মধ্যেই ওই শহরের বিশাল জনসংখ্যার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এছাড়া গত মে মাসে পুরো উহান শহরের বাসিন্দাদের করোনা পরীক্ষা করেছে চীন। সে সময় মাত্র ১০ দিনে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেহে করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।

Advertisement

এদিকে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, কাশগার শহরে নতুন করে ১৩৮ জন উপসর্গহীন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীনেই প্রথম করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়লেও গত কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় দেশটি করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে ছোট আকারে প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।

জিনজিয়াং প্রদেশে মূলত উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। তবে চীন বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কাশগারে সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া সেখানকার বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে। নাহলে তারা শহর ছেড়ে বের হওয়ার অনুমতি পাবেন না।

কাশগারে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটে শুফু কাউন্টিতে। একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করা এক নারী করোনায় আক্রান্ত হন। যদিও তিনি ছিলেন উপসর্গহীন রোগী।

Advertisement

রুটিন মাফিক করোনা পরীক্ষার অংশ হিসেবে ওই নারীর নমুনা পরীক্ষা করা হলে তার করোনা ধরা পড়ে। গত ১০ দিনের মধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ডে এটাই ছিল স্থানীয় কোনো বাসিন্দার প্রথম সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা।

শনিবার থেকে চীনে গণহারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে ১৩৭ জন উপসর্গহীন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে চীনে উপসর্গহীন কোনো রোগীকে সরকারি হিসাবে সংক্রমণের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয় না।

চীনে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৮১০। এর মধ্যে মারা গেছে ৪ হাজার ৬৩৪ জন। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাশগার শহরে ২৮ লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী দু'দিনের মধ্যে বাকি নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।

কাশগার শহরটি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। জিনজিয়াং প্রদেশের বিতর্কিত বন্দিশালায় যথেষ্ট নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিম। সেখানে জীবাণুনাশক সাবান ও বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় মহামারি আকার ধারণ করতে পারে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে যে, জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমদের আটকে রেখেছে চীন সরকার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গণকারাগারে বন্দিদের আটকে রেখে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বিভিন্ন এনজিও ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘আসলে সেখানে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষ খুব কমই জানতে পারছে।’ তবে বেইজিং দাবি করেছে, ক্যাম্পগুলো আসলে প্রশিক্ষণাগার। আর সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এ ধরনের প্রশিক্ষণাগার থাকা জরুরি।

উইঘুর সম্প্রদায়ভুক্ত ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী দিলনুর রেইহান বলেছেন, ‘উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকরা কঠিন বিপদের সম্মুখীন। করোনাভাইরাস প্রাদুভার্বের মধ্যেই আমাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে বসবাস করছে। আমরা জানি না তারা পর্যাপ্ত খাদ্য-পানি পাচ্ছে কি না বা তাদের যথেষ্ট মাস্ক আছে কি না।’

সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির সঙ্গে রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জিনজিয়াংয়ে জোরপূর্বক শ্রমিকদের দিয়ে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলো হচ্ছে সুতা এবং টমেটোর তৈরি বিভিন্ন জিনিস। মূলত জিনজিয়াং থেকে এসব পণ্যই চীন বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রচুর অর্থ আয় করে থাকে।

অনেকদিন ধরেই জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের প্রতি চীনের দমন-পীড়নের ঘটনায় নানাভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

টিটিএন