নামাজ ফরজ ইবাদত। জামাআতে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। এর পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো- যে কাজ সবাই মিলে একসঙ্গে সম্পাদন করে তার ফলাফল দ্রুত পাওয়া যায়। ঠিক জামাআতের সঙ্গে পড়লেও তা দ্রুত কবুল হয়।
Advertisement
আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার অন্যতম মাধ্যমও নামাজ। কুরআনুল কারিমে দোয়া বুঝাতে সালাত শব্দের ব্যবহার করেছেন। কেননা নামাজ শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো- ‘সালাত’। যার অর্থ হলো- দোয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلاَتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
‘আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তিস্বরূপ। মূলত আল্লাহ তাআলা সবকিছুই শোনেন, জানেন।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ১০৩)
Advertisement
হাদিসের বর্ণনায়ও ‘সালাত’ শব্দ দ্বারা দোয়ার কথা বুঝিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ فَلْیُجِبْ، فَإِنْ كَانَ صَائِماً فَلْیُصَلِّ
‘তোমাদের কাউকে (খাবারের) দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন তাতে উপস্থিত হয়। অতপর সে যদি রোজাদার হয়, তবে সে যেন মেজবানের জন্য (বরকত, কল্যাণ ও মাগফেরাতের) ‘দোয়া’ করে।’ (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন মুসলমানকে অনেক গুরুত্বের সঙ্গে জামাআতে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা জামাআতে নামাজ পড়লে তা কবুল হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
Advertisement
নামাজ, জামাআত ও দোয়া কবুল
ইসলামি শরিয়তে নামাজ এমন একটি ইবাদত; যা শুধু মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ ও সাওয়াবের আশায় করা হয়। এ নামাজ মহান আল্লাহ বড়ত্ব প্রকাশস্বরূপ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু করা হয়। আর শান্তির বানি সালাম দিয়ে শেষ করা হয়।
জামাআতে নামাজ দ্রুত কবুল হয়। কেননা একাধিক মানুষ একসঙ্গে নামাজে আল্লাহর কাছে হাজির হয়। বিশেষ করে ইমাম যখন প্রকাশ্য তেলাওয়াতে সুরা ফাতেহা পড়া শেষ করেন, তখন নামাজে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিই ‘আমিন’ বলে থাকেন। কারও ‘আমিন’ বলা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে গেলে; ওই নামাজে অংশগ্রহণকারীর সব দোয়াই দ্রুত কবুল হয়ে যায়। জামাআতে নামাজ পড়ার বহুগুণ সাওয়াব ও ফজিলতের কথা এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়। তাহলো-
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একা একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাআতে নামাজ পড়ার ফজিলত ২৭ গুণ বেশি।’ (বুখারি ও মুসলিম)
- তিনি আরও বলেছেন, ঘরে একাকি নামাজ পড়ায় রয়েছে এক নেকি। পাঞ্জেগানা মসজিদে নামাজ পড়ায় রয়েছে ২৫ গুণ নেকি। আর জুমআ মসজিদে নামাজ পড়ায় ৫০০ গুণ। মসজিদে আকসায় নামাজ পড়ায় ৫০ হাজার গুণ নেকি, আমার (বিশ্বনবির) মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববিতে নামাজ পড়ায় ৫০ হাজার গুণ নেকি এবং মসজিদে হারাম বা কাবার শরিফে নামাজ পড়ায় এক লাখ গুণ নেকি পাওয়া যায়।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাআতে নামাজ পড়ার ফজিলত বর্ণনা করে বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে অজু করে ফরজ নামাজ (জামাআতে) পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে যায়, ওই ব্যক্তি একজন ইহরামওয়ালা হজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির (সমান) নেকি পান। (আহমাদ, আবু দাউদ, মিশকাত)
- এক অন্ধ সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, ‘আমাকে নিয়ে মসজিদে আসা-যাওয়ার মতো কোনো লোক নেই। তাই আমাকে ঘরে নামাজ পড়তে অনুমতি দেবেন কি? বিশ্বনবি অন্ধ সাহাবিকে জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি কি আজান শুনতে পাও? সে বলল- ‘জ্বি-হ্যাঁ’! তিনি বললেন, তবে তোমাকে মুয়াজ্জিনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মসজিদে এসেই নামাজ পড়তে হবে।’ (মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে জামাআতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলতের বিষয়টি সুস্পষ্ট। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাননি যে, তাঁর কোনো উম্মত এত ফজিলত ও সাওয়াবের কাজ থেকে বিরত থাকুক। এ কারণেই তিনি জামাআতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অন্ধ সাহাবির অনুমতি প্রার্থনা এবং আজান শোনার বিষয়টি জেনে নামাজে আসার নির্দেশই এর প্রমাণ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দ্রুত নামাজ কবুলে মসজিদে এসে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। অধিক সাওয়াব লাভে মসজিদে এসে জামাআতে নামাজ আদায় করা। হজের সাওয়াব লাভে মসজিদে এসে জামাআতে নামাজ আদায় করা। কেননা কবুল হজের বিনিময় শুধুই জান্নাত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জামাআতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দ্রুত দোয়া কবুল হওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম