ইসলাম নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আরব অঞ্চলসহ মুসলিম বিশ্বে ফরাসি পণ্য বয়কটের হিড়িক পড়ে গেছে। অনেক খ্যাতনামা চেইন শপসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে ফরাসি পণ্য বিক্রি। করোনাকালে এই বয়কটের সুদূরপ্রসারী প্রভাব আঁচ করতে পেরে আরব দেশগুলোর প্রতি পণ্য বয়কট বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে ফ্রান্স।
Advertisement
রোববার (২৫ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অনুরোধ জানায়। এতে বলা হয়, মহানবী মুহাম্মদ (সা.)- এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের পর সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে ফ্রান্সের পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাকও পড়েছে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশে।
‘বয়কটের এসব আহ্বান ভিত্তিহীন এবং অবিলম্বে এগুলো বন্ধ হওয়া উচিৎ। সেই সঙ্গে সব ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাব, যা একটি উগ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উস্কে দিচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে’- বলা হয় বিবৃতিতে।ইসলামবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ভোট বাগে রাখতেই এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এমন বিতর্কিত অবস্থান নিয়েছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের
সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)- এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শন করেন ধর্মবিদ্বেষী এক শিক্ষক। এর জেরে চেচেন বংশোদ্ভূত এক কিশোর গলা কেটে হত্যা করে তাকে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। চালানো হতে থাকে ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী প্রচারণা।
Advertisement
হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি তার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মহানবীর (সা.) কার্টুন দেখানোর পর তা নিয়ে বিতর্কেরও আয়োজন করেন। তারপর থেকেই হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি। গত শুক্রবার নিজ কর্মস্থল মিডল স্কুলটির সামনের সড়কেই হামলার শিকার হন প্যাটি।
ওই ঘটনার পর কথিত ‘ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদের’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, ‘এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ফ্রান্সের সরকারি ভবনে মুহাম্মদকে (সা.) ব্যঙ্গ করে চিত্র প্রদর্শন বন্ধ হবে না।’
এরপর গতকাল এক টুইট বার্তায় এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমরা কখনোই ইসলামী মৌলবাদীদের কাছে নতি স্বীকার করবো না।’বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের মার্কেট থেকে ফরাসি পণ্য সরিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা
তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থনের নামে ইসলামবিরোধী ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শন ও বক্তব্যকে উসকানি দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য গ্রহণ ও যুক্তিযুক্ত মতামতকে প্রতিহত করি না।’
Advertisement
এরপর থেকে আরব বিশ্বের দেশগুলোতে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের হিড়িক পড়ে যায়। কুয়েতের বেসরকারি সংস্থা গ্রাহক সমবায় সমিতিগুলো ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ফরাসি পণ্য বয়কট করেছে। দেখা গেছে, দেশটির কয়েকটি দোকান থেকে ফরাসি কোম্পানির পণ্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
রোববার আরব বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবে হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে ফ্রান্সের ফরাসি বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্যারফুর বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। জর্ডান ও কাতারেও একইভাবে ফরাসি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ভোট বাগে রাখতে ম্যাক্রোঁর এমন বিতর্কিত মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এক বিবৃতিতে এরদোয়ান বলেছেন, ‘ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা করা দরকার।’
এমএসএইচ