শেখ আনোয়ার
Advertisement
প্রতিদিনের এক জরুরি কাজ, দাঁত পরিষ্কার করা। দাঁতকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই ব্রাশ করা জরুরি! টুথপেস্ট হলো একধরনের পেস্ট বা জেল, যা টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে, দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও মুখের স্বাস্থ্য বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। টুথপেস্ট দাঁত থেকে ডেন্টাল প্লাক এবং খাবার অপসারণে সহায়তা করে। মুখের দুর্গন্ধ দমনে সহায়তা করে। দাঁতের ক্ষয় এবং মাঢ়ির রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় উপাদান (বেশিরভাগই ফ্লোরাইড) সরবরাহ করে।
বাণিজ্যিক টুথপেস্টের জন্য প্রতিস্থাপনযোগ্য উপকরণগুলো হলো লবণ, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (বেকিং সোডা) ইত্যাদি। দাঁত মাজার বিষয় নিয়ে সারাবিশ্ব বাণিজ্য করলেও দাঁতের পরিচর্যায় একটি ভালো টুথপেস্ট অবশ্যই দরকার রয়েছে। টুথপেস্টের পাশাপাশি মানসম্পন্ন টুথব্রাশের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে কোনটি ব্যবহার করবো? আবার সব জিনিসের মতোই টুথব্রাশেরও স্থায়িত্বকাল রয়েছে।
সাধারণত ব্রাশের দাঁড়াগুলো বেঁকে গেলে সেটি আর ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই টুথব্রাশ অবশ্যই ভালো ব্রান্ডের হতে হবে। প্রতিটি টুথব্রাশের দাঁড়া বা ব্রিসল বেঁকে না গেলেও দু’তিন মাসের বেশি সময় ব্যবহার না করাই উচিত। টুথব্রাশ নরম হলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে খুব বেশি নরম হলে এক্ষেত্রে আপনাকে বেশি বেশি টুথব্রাশ পাল্টাতে হবে।
Advertisement
এবার প্রশ্ন হলো, বাজারে অনেক টুথপেস্টের মধ্যে কোন টুথপেস্ট ব্যবহার করা ভালো? কারণ টুথপেস্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সব চটকদার সুপার ভিজুয়াল গ্রাফিক্সের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে, যা দেখে মনে হয় সবারটিই বুঝি ভালো। অবস্থা এমন যে কোনটি ছেড়ে কোনটি ব্যবহার করবো। আবার কোনো কোনো টুথপেস্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রচার করে, তাদের টুথপেস্ট বিশেষ সংস্থা কর্তৃক অনুমোদনকৃত।
কিন্তু অনুমোদন কীভাবে হলো, অনুমোদনের প্রক্রিয়া বা অনুমোদনের মধ্যে অন্য কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা, গোপনীয়তা রয়েছে কি-না এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সবচেয়ে বড় সত্য কথাটি হলো, পৃথিবীর কোনো স্থানে এমন কোনো টুথপেস্ট নেই, যার মধ্যে দাঁত ও মুখের জন্য উপকারী সব উপাদান একসঙ্গে রয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও এ ধরনের টুথপেস্ট প্রস্তুত করা সব সময় সম্ভব হবে না।
জেনে রাখা ভালো, অতিরিক্ত টুথপেস্ট ব্যবহারে দাঁতের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গবেষণা বলছে, ‘অতিরিক্ত টুথপেস্টের ব্যবহার থেকে ডেন্টাল ফ্লুরোসিস নামের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ ফ্লুরাইড এক চমৎকার এবং উপকারী খনিজ পদার্থ। যা পাওয়া যায় পানি ও মাটিতে। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, যাদের দৈনন্দিন পান করার পানিতে ফ্লুরাইড বেশি রয়েছে; তাদের দাঁতে ক্যাভিটির মাত্রা কম। সে থেকেই সাপ্লাইয়ের পানি, টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ ইত্যাদিতে ‘ফ্লুরাইড’ যোগ করা শুরু হয়।
তবে এর ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। জন্মের পর প্রথম আট বছর অতিরিক্ত ফ্লুরাইডের সংস্পর্শে এলে তাতে দাঁতের যে ক্ষতি হয় তাকেই বলা হয় ডেন্টাল ফ্লুরোসিস। অথচ সাধারণ বিজ্ঞাপন দেখে অনেকের মনে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়, বেশি করে পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে হবে। কিন্তু তা একদম ঠিক নয়। দাঁত পরিষ্কার করতে আসলে ব্রাশের ব্রিসল কাজ করে, পেস্ট নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁত ব্রাশ করার জন্য মটরশুঁটির দানার পরিমাণ টুথপেস্ট ব্যবহার করাই যথেষ্ট। ব্রাশ ভর্তি করে পেস্ট নেওয়ার কোনো দরকার নেই।
Advertisement
গত দু’ দশক ধরে বিশ্বজুড়ে শরীরের উপর টুথপেস্টের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে একাধিক গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে, টুথপেস্টে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত বিষ। টুথপেস্টে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান থাকলেও মন্দ রাসায়নিক উপাদানের একটি হলো সোডিয়াম লরিল সালফেট বা এসএলএস। বহুজাতিক কেম্পানিগুলো টুথপেস্ট বানাতে এই সোডিয়াম লরেল সালফেট, ফ্লরাইড, ট্রিকোলসাম এবং আর্টিপিসিয়াল সুইটনারের মতো উপাদান হরহামেশা ব্যবহার করে। যা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।
একটি আন্তর্জাতিক স্টাডি অনুসারে, এসব উপাদান আমাদের স্বাদ গ্রন্থিদের নষ্ট করে দেয়। সে সঙ্গে স্কিন ইরিটেশন, এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, ট্রিকোলসাম এবং আর্টিফিশিয়াল সুইটনারও নানা দিক থেকে শরীরের ক্ষয় ঘটিয়ে থাকে। আমাদের দেশে বাজারজাতকৃত অধিকাংশ টুথপেস্টেই এসএলএস বিদ্যমান।
নাম প্রকাশ না করেই বলা যায়, এমনও টুথপেস্ট রয়েছে যা সবাই ব্যবহার করে। কিন্তু তাতে প্রচুর পরিমাণে এসএলএস থাকার কারণেই অনেকের মুখে কোনো রোগ না থাকার পরও মুখে আলসার বা ঘা দেখা দেয়। তাই টুথপেস্ট ব্যবহারের আগে টুথপেস্টের মন্দ রসায়ন সম্পর্কে সচেতন ও সাবধান হতে হবে। তা না হলে মুখে আলসার হলে রিবোফ্লাভিন ট্যাবলেট খেতে খেতে জীবন অতিবাহিত করতে হবে।
আর হ্যাঁ, মনে রাখতে হবে- মুখে আলসার হলেই তা টুথপেস্টের কারণে হয়েছে এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। তার চেয়ে দাঁত ও ওরাল মিউকাসের ধরন দেখেই নির্ধারণ করতে হবে কোন টুথপেস্ট আপনার জন্য ভালো। এজন্য ভালো হয় যদি বিশেষজ্ঞ দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। সাধারণত: ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দাঁতের জন্য ভালো। তবুও মাঝে মধ্যে টুথপেস্টের ব্রান্ড বদলালে ভালো হয়।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/এএ/এমএস