দুই বাংলার নন্দিত গায়ক, গীতিকবি, সুরকার ও সংগীত পরিচালক কবীর সুমন। গানে গানে বিপ্লব ও প্রেমকে তিনি ফুলের মতো ফুটিয়েছেন শ্রোতাদের অন্তরে। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সুমন গান করে চলেছেন এখনো দিব্যি।
Advertisement
সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের শ্রোতাদের জন্য বেশ কিছু গান লিখেছেন জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবরের কণ্ঠে। সর্বশেষ তিনি কাজ করতে যাচ্ছেন পরীমনি অভিনীত সিনেমা ‘প্রীতিলতা’-য়। এর ভিড়েই হঠাৎ এক চিঠি ভাইরাল হলো এই কিংবদন্তির। যা তার ভক্তদের মধ্যে দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। ফেসবুকে পোস্ট করা অদ্ভূত সেই চিঠিতে কবীর সুমন দাবি করেছেন, মৃত্যুর পর তার যত সৃষ্টি সব যেন ধ্বংস করে ফেলা হয়। সেইসঙ্গে মরণোত্তর দেহ দানের কথা বলে বিষয় সম্পত্তির একজন উত্তরাধিকারও নির্বাচন করে গেলেন তিনি।
হাতে লেখা সেই চিঠিতে সুমন লিখেছেন, ‘সকলের অবগতির জন্য সজ্ঞানে-
সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনাচিন্তায় ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি, আমার কোনো অসুখ করলে, আমায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে অথবা আমি মারা গেলে আমার সম্পর্কিত সবকিছুর, প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে দায়িত্বগ্রহণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার থাকবে একমাত্র মৃন্ময়ী তোকদারের (মায়ের নাম প্রয়াত প্রতিমা তোকদার, বাবার নাম দেবব্রত তোকদার)। অন্য কারোর কোনো অধিকার থাকবে না এইসব বিষয় ও ক্ষেত্রে।’
Advertisement
মরণোত্তর দেহদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনো স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পান্ডুলিপি, গান, রচনা, স্মরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য- হাতে লেখা সবকিছু, অডিও এবং ভিডিও ফাইল- আমার কোনোকিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়৷ এর অন্যথা হবে আমার অপমান।’
হঠাৎ কেন এমন চিঠি তিনি লিখলেন তার ব্যাখ্যায় কবীর সুমন বলেন, ‘খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর। খোলাখুলি সকলকে জানিয়ে রাখছি। অনুগ্রহ করে মতামত দেবেন না। ভাল মন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি। অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি।’ ‘ফেসবুকে, যাতে অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, যাবো। আমার জীবনে কোনও হতাশা, দু:খ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই। আমি সানন্দে বেঁচে আছি, আমার কাজ করে যাচ্ছি। আমার জীবনে ভালবাসা কামনা কাম লালসা আনন্দ স্ফুর্তি মজা রঙ্গরগড় হাসাহাসি নিভৃত কান্না কাজ অধ্যবসায় নিয়মিত রেয়াজ পরিশ্রম সৃজনশীলতা সবই আছে।’ ‘প্রয়াত খুশওয়ান্ত সিং তাঁর ‘দ্য অন্ড অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘কাজই ধর্ম’। আমি তাই-ই মনে করি। আমার ধর্ম কাজ। প্রতিনিয়ত আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, অর্থাৎ স্বধর্ম পালন করছি। আমি জানি আমি সানন্দে, খুশি মনে মারা যাবো।’
‘আমি বেঁচে আছি বাংলা খেয়াল বাংলা গান সুরতালছন্দলয়, আমার স্বভাবসিদ্ধ ভালবাসা কাম কামনা খামখেয়ালিপনা inconsistency এক ধরণের ক্ষ্যাপামি আর সুরতাললয়ে থেকে মৃত্যুর অপেক্ষায়। অন্য কোনও বিষয়ে আমি নেই।’ জন্মস্বাধীনস্বপরিশ্রমে ও স্বখরচায় স্বেচ্ছাচারী,
কবীর সুমন২৩.১০.২০কলকাতা
Advertisement
আমার স্বহস্তে লেখা ইচ্ছাপত্রর ছবি তুলে ছাপিয়ে দিলাম।’
এলএ/এসআর