পরকালে ভালো ও মন্দ কাজের মীমাংসা করবেন মহান আল্লাহ তাআলা। আগের আয়াতে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কীভাবে এ মীমাংসা করা হবে? এ মীমাংসার ধরণ বর্ণনা করে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
Advertisement
فَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُواْ فَأُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ - وَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الظَّالِمِينَ - ذَلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ الآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ
‘অতএব যারা অবিশ্বাসী হয়েছে, তাদের আমি দুনিয়াতে এবং আখেরাতে কঠিন শাস্তি দেব এবং (সেখানে) তাদের (পক্ষে) কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। আর পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে; (পরকালে) তাদের (উত্তম) প্রতিদান পরিপুর্ণভাবে দেয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদের ভালোবাসেন না। আমি তোমাদের এ সব আয়াত এবং নিশ্চিত বর্ণনাগুলোই পড়ে শুনাই।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৫৬-৫৮)
আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদযারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে আমি তাদের দুনিয়াতে হত্যা, বন্দি ও জিজিয়া কর আরোপের মাধ্যমে শাস্তির প্রতিদান দিই আর জাহান্নামের আগুণে নিক্ষেপ করে পরকালে কঠোর শাস্তির প্রতিদান প্রদান করবো। আর তাদের কোনো সাহায্যকারী নেই। তা থেকে রক্ষাকারীও নেই।
Advertisement
আর যারা ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে; তিনি তাদের প্রতিদান পুরোপুরি প্রদান করবেন। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসবেন না। অর্থাৎ তিনি তাদের (সীমালঙ্ঘনকারীদের) শাস্তি দেন।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলঅ এক খণ্ড মেঘ প্রেরণ করেছিলেন। তা তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তখন তাঁর মা তাঁকে জড়িয়ে ধরেন এবং কেঁদে উঠেন। তখন তিনি মাকে শান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন- কেয়ামত আমাদের একত্রিত করবে। ওই রাত ছিল ‘পবিত্র লাইলাতুল কদর’। তিনি ওই সময় বায়তুল মুকাদ্দাসে ছিলেন। তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ। এরপর তাঁর মা আরও ৬ বছরকাল জীবিত ছিলেন।
ইমাম বুখারি ও মুসলিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এক হাদিসে বর্ণনা করেন যে, তিনি কেয়ামতের কাছাকাছি সময়ে পুনরায় দুনিয়াতে অবতরণ করবেন। আমাদের নবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান অনুসারে তিনি ফয়সালা দেবেন। দাজ্জাল ও শুকর হত্যা করবেন। ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন এবং জিজিয়া কর রহিত করবেন।
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিম এসেছে, তিনি ৭ বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। আবু দাউদ ত্বয়াসিলির বর্ণনায় আছে যে, তিনি দুনিয়াতে ৪০ বছর অবস্থান করে মারা যাবেন এবং তার জানাজার নামাজ হবে। এ বর্ণনাটির মর্ম সম্ভবত এই যে, তাঁর আকাশে উত্থানের আগের ও পরের মোট অবস্থান হবে ৪০ বছর।
Advertisement
তা হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে উল্লেখিত কাহিনী- হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে নিদর্শন বা ভাব ও সারমর্ম এবং বাণী; আল কুরআন থেকে আবৃত্তি করছি; বিবৃত করছি।’ (তাফসিরে জালালাইন)
আয়াতের ব্যাখ্যামীমাংসার বিবরণ এই যে, আল্লাহ তাআলার বিধানসহ বিভিন্ন বিষয়ে যারা মতবিরোধ করতো সেসব কাফের অবিশ্বাসীদের কুফরি তথা অবিশ্বাসের কঠোর শাস্তি দুনিয়াতেও হয় আর পরকালেও হবে। এসব অবিশ্বাসীদের কোনো সাহায্যকারী কিংবা তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী কেউ হবে না।
আর যারা মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা পোষণ করেছে এবং সে অনুযায়ী তার বিধান বা হুকুম মেনে ভালো কাজ করেছে, অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকেছে, আল্লাহ তাআলা তাদের ঈমান ও ভালো কাজের পুরস্কার দেবেন।
কাফেরদের শাস্তি দেয়ার কারণ হলো- তারা আল্লাহ ও তার রাসুলদের অবিশ্বাস করেছে। বস্তুত যারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে অস্বীকার করে; তারাই জালিম তথা অত্যাচারী। আর আল্লাহ তাআলা কোনো জালিম-অত্যাচারীকে ভালোবাসেন না। তাদের দুনিয়া ও পরকালে কঠোর শাস্তি দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তাআলা এসব বিষয়গুলেঅ উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য বিশ্বনবির নবুয়তের সত্যতার নিদর্শন স্বরূপ বর্ণনা করেন এবং শুনিয়ে দেন।
দুনিয়া ও পরকালে আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদের শাস্তি দেবেন মর্মে দুনিয়ার শাস্তি আবার কী? আর পরকালে দুনিয়ার শাস্তিই বা দেবেন কী করে? এর সমাধান হলো-
দুনিয়ায় অবিশ্বাসীদের সাজাতো হয়েই গেছে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে নানা উপায়ে অবিশ্বাসীদের সাজা দিয়ে থাকেন। আবার পরকালের সাজার সঙ্গে তা যোগ হবে। যা হয়ে যাবে দ্বিগুণ। এর উদাহরণ এমন- কোনো অপরাধীকে লক্ষ্য করে বিচারকরা উক্তি করেন যে, এ অপরাধের কারণে তোমাকে এক বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি যদি পুনরায় একই বা সমজাতীয় অপরাধ করে বসে তবে তার জন্য আর বিচার ফয়সালার প্রয়োজন নেই, বরং তার জন্য দ্বিগুণ সাজা এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর ভোগ করতে হবে।
আলোচ্য আয়াতেও তা বুঝানো হয়েছে, দুনিয়ার সাজা তো সাব্যস্ত হয়েই গেছে। পরকালের সঙ্গে এ সাজাযুক্ত হবে। আর সেদিনই তাদের মন্দ কাজের পূর্ণ সাজা দেয়া হবে। কোনোভাবেই দুনিয়ার সাজা পরকালের সাজার প্রায়শ্চিত্ত হবে না।
পক্ষান্তরে মুমিন বান্দার অবস্থা এর বিপরীত। দুনিয়াতে তাদের উপর কোনো বিপদ এলে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময় তাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন আর পরকালে ছোট ছোট সাজাগুলো রহিত হয়ে যায়। সে কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তিনি কোনো অত্যাচারীকে ভালোবাসেন না।
কেননা মুমিনগণ ঈমান গ্রহণ করার কারণেই মহান আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা। প্রিয়জনের সঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা ভালো ব্যবহারই করবেন। পক্ষান্তরে অবিশ্বাসীরা কুফরির কারণে আল্লাহর চরম ঘৃণার পাত্র।’ (বয়ানুল কুরআন ও মারেফুল কুরআন)
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে পরকালের কঠিন সময়ে ভালো কাজের উসিলায় মন্দ কাজ ও পাপগুলো ক্ষমা করে চূড়ান্ত মুক্তি দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর