জাতীয়

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কাজ করছে সরকার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বনজ সম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্নমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বা এর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত হতে বিশ্বের সকল দেশ, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সকল দেশের সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তনের গতি শ্লথ করে বৈশ্বিক বিপদ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারি।’

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ ও ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘ইমপ্যাক্টস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অন বে অভ বেঙ্গল অ্যান্ড অন কোস্টাল সোশ্যাল ইকোলজিক্যাল সিস্টেম’ বিষয়ক এক ওয়েবিনারে সরকারি বাসভবন থেকে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ওয়েবিনারে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।

জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বন্যা, খরা, সাইক্লোন, লবণাক্ততা এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত ৩০ বছরে উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বছরে প্রায় ৬ থেকে ২১ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে যা বৈশ্বিক গড় সমূদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার চেয়ে বেশি।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু এবং সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া, অভিপ্রয়াণের প্যাটার্ন এবং বেঁচে থাকার হারকে প্রভাবিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্ররোচিত বন্যা, নদীভাঙন এবং উপকূলীয় জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে কৃষিজমির এবং স্বাদুপানির মাছের আবাসগুলোর ক্ষতি করে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং হাইড্রোলজির মতো ভৌত বিষয়গুলোর দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছের প্রজনন, বৃদ্ধি এবং মাইগ্রেশন সবই প্রভাবিত হয়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি যতই ন্যূনতম হোক না কেন, সমতলপৃষ্ঠ তাতে হ্রাস পেতে পারে এবং মিঠাপানির প্রজাতিগুলোর অবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে। এর ফলে মিঠাপানির মাছের উৎপাদন প্রভাবিত হবে, বিশেষত সেসব মাছের যাদের লবণাক্ততা সহনশীল নয়।’

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘দ্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান-২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে যার আওতায় বিভিন্ন অভিযোজন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া আমরা ‘ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান’ প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের মোকাবিলার জন্য বেশ কিছু অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উপকূলীয় বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’

বন মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে উন্নয়নের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্তকরণের লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় ও সমুদ্র সম্পদ এবং প্রতিবেশ ও জীব সম্পদের সমন্বিত তথ্যভাণ্ডার তৈরির লক্ষ্যে সমুদ্র জীববৈচিত্র্যের জরিপ সম্পাদনের কাজটি একটি সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ‘অ্যাসেসমেন্ট অব কোস্টাল মেরিন বায়োডাইভার্সিটি রিসোর্সেস অ্যান্ড ইকোসিস্টেম টু ইমপ্লিমেন্ট দ্য ব্লু ইকোনমি অ্যাকশন প্ল্যান’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’

Advertisement

এমইউ/এফআর/এমএস