দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষমতাধর মুসলিম রাষ্ট্র মালয়েশিয়া। দেশটির রাজনীতির মাঠে উত্তাপ বইছে। এ উত্তাপে চলছে ক্ষমতা দখলের অব্যাহত লড়াই। আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ডা. তুন মাহাথিরকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তারই হাতেগড়া নতুন রাজনৈতিকদল পেজুয়াং।
Advertisement
আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত ‘দেশ বাঁচাতে’ তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছে। মহাথির মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে প্রধানমন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত করতে প্রার্থী হিসেবে কাউকে বা কোনও বিশেষ ব্যক্তিকে সমর্থন দেওয়া অস্বীকার করার কয়েকদিন পরে এই সিদ্ধান্ত আসে।
মাহাথিরের রাজনৈতিক সম্পাদক আবু বকর ইয়াহিয়া এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘দলের সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে দেশকে বাঁচাতে চাইলে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিস্থাপন করার জন্য মাহাথির তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।’
যদিও এর আগে মাহাথির সাংবাদিকদের বলেছেন, `আগামী সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না।’ এদিকে প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম।
Advertisement
তিনি দাবি করেছেন, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন আছে তার প্রতি। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন সরকার গঠন করতে চান। এ কথা জানাতে সম্প্রতি সাক্ষাৎ করেন রাজা সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ’র সঙ্গে। তার কাছে দাবির পক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
এরপর ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টি (ডিএপি) ও আমানাহর নেতারা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়, রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আলাদাভাবে তাদেরকে তলব করা হয়েছে। এই দুটি দলই আনোয়ার ইব্রাহিমের মিত্র।
তবে সর্বশেষ খবর হলো- আনোয়ার ইব্রাহিমের এসব মিত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ স্থগিত করেছে রাজপ্রাসাদ। বিরোধী দলীয় নেতারা ১৪ অক্টোবর বুধবার এ তথ্য দিয়েছেন।
ডিএপির সেক্রেটারি জেনারেল লিম গুয়ান ইং এবং আমানার প্রেসিডেন্ট মো. সাবু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে রাজার সিনিয়র প্রাইভেট সেক্রেটারি জানিয়েছেন, উভয় দলের সঙ্গে তার আলাদা আলাদা বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। তবে নতুন কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এই দু’নেতা কিছু বলেননি। উল্লেখ্য, গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের দলের সদস্য মুহিদ্দিন ইয়াসিন দলের ভেতরে গোপনে নিজের পক্ষে সদস্যদের টানতে থাকেন। বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
Advertisement
তিনি ঘোষণা দেন, তারই রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন। ওদিকে এমন প্রেক্ষাপটে পদত্যাগে বাধ্য হন মাহাথির মোহাম্মদ। সত্যি সত্যি সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়ে মার্চে প্রধানমন্ত্রী হন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। কিন্তু তারপর পার্লামেন্ট অধিবেশন বন্ধ হয়ে যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে।
একদিন শুধু রাজার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে সামান্য সময়ের জন্য পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বান করে সরকার। এদিন কৌশলে বিরোধীদের নোটিশ এড়িয়ে যায় তারা। তারপর প্রায় ৮ মাস কেটে গেছে। এখন নতুন করে ক্ষমতার রশি ধরে টান দিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
তিনি ১২ অক্টেবর সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘পার্লামেন্টে যে ২২২টি আসন আছে তার মধ্যে ১২০ জনেরও বেশি এমপি তাকে সমর্থন করেন। ফলে তিনি নতুন সরকার গঠন করতে চান। এরও আগে তিনি এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে সে সময় কি পরিমাণ এমপি তাকে সমর্থন করেন তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
সোমবারের ওই তথ্য নিয়ে তিনি মঙ্গলবার রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর রাজপ্রাসাদ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়, আনোয়ার ইব্রাহিম তাকে সমর্থনকারী এমপিদের সংখ্যা জানিয়েছেন। তবে তার এসব সমর্থকদের পরিচয় প্রকাশ করেননি।
বর্তমান পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর মাত্র দুটি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে যে কোনো সময় তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় রাজা শুধু বড় বড় আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করেন। তবে কোনো পার্লামেন্ট সদস্য বা দলনেতাকে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি সমর্থন করেন, তাহলে তাকে তিনি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার সাধারণত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়। কিন্তু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রাজা।
চলতি বছর মার্চে মালয়েশিয়ার রাজনীতি ও সরকারে এক টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছিল। ওই সময়ে তখনকার ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটের কিছু বিপথগামী সদস্য ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজিতদের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে।
তার সঙ্গে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনও। তাদের ষড়যন্ত্রে ক্ষমতা হারাতে হয় ৯৫ বছর বয়সী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদকে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবির্ভূত হন মুহিদ্দিন ইয়াসিন।
এমআরএম/এমএস