ঢাকাই চলচ্চিত্রের ৬১ বছরের ইতিহাসে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের গল্প আছে। রয়েছে নানা বাঁক বদলের কাহিনিও। তেমনি ২০০৬ সালের ১৮ আগস্ট মুক্তি পাওয়া ‘হৃদয়ের কথা’ নামের ছবিটিও অনেক কিছুর জবাব দিয়েছিল। একটা বলার মতো মোড় ঘুরেছিল বাংলা গানের আঙিনায়ও।
Advertisement
অশ্লীলতা আর বিদেশি নগ্ন ছবি কিংবা কুরুচিপূর্ণ কাটপিস যখন অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরেছিল এ দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে, তখন রুচিশীল-শিক্ষিত দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সিনেমা হল থেকে। সেই সময় আশীর্বাদের ডাক নিয়ে আসলেন পরিচালক এস এ হক অলিক। তৎকালীন জনপ্রিয় জুটি রিয়াজ-পূর্ণিমাকে নিয়ে নির্মাণ করলেন ‘হৃদয়ের কথা’ ছবিটি। এর প্রযোজনাও করেছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ।
‘হৃদয়ের কথা’ মুক্তি পেয়েই প্রমাণ করেছিল ভালো সিনেমা কোনো দিন দর্শক খরায় ভোগে না। মৌলিক গল্প, রোমান্টিক আমেজ, জনপ্রিয় জুটির নান্দনিক অভিনয়, শ্রুতিমধুর সব গান, নির্মাণের মুন্সিয়ানায় ‘হৃদয়ের কথা’ চমকে দিল ইন্ডাস্ট্রিকে। সব শ্রেণির মানুষ হলে ফিরল উৎসব আমেজে। এ ছবির সাফল্যে অনুপ্রাণীত হয়ে চলচ্চিত্রে ফিরলেন অশ্লীলতার জন্য অভিমানে চলচ্চিত্র ছেড়ে দেয়া অনেক নির্মাতা ও শিল্পী।
বিশেষ করে বাংলা গানের ভুবনে তখন ভীষণ খরা। আধুনিক গানের যে জনপ্রিয়তা সেটি প্রায় হারাতে বসেছিল। ফিতার ক্যাসেট ছেড়ে সিডিতে ধাবমান হওয়া ইন্ডাস্ট্রি ভুগছিল নতুন কিছু গ্রহণের সিদ্ধান্তহীনতায়। সেই সাথে পাইরেসিও ছিল মাথাব্যথার কারণ। সেই সময় হাবিব ওয়াহিদ যেন জাদুর পরশ নিয়ে এলেন ‘হৃদয়ের কথা’ ছবিতে ‘ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু’ গানটি নিয়ে।
Advertisement
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের কাছে তো বটেই, ভিন্ন আমেজ আর হৃদয় ছোঁয়া সুরের কাছে মন সঁপেছিলেন সব বয়সের শ্রোতাই। তখন প্রায় সবখানেই বেজেছে এই গানটি। পাশাপাশি এসআই টুটুলের কণ্ঠে ‘যায় দিন যায় একাকী’ গানটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই গানগুলো বাংলা ছবির গানে নতুন মাত্রা যোগ করে দিল। সেই থেকে আজ অবধি চলচ্চিত্রের গানে একটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এ বছর ছবিটি মুক্তির ১৪ বছর পূর্ণ হলো। পরিচালক এস এ হক অলিক এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন। তিনি একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ১৪ বছর আগে, আমার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র হৃদয়ের কথা মুক্তি পায়। আগের রাতে চিন্তায় একদম ঘুমাতে পারিনি। শুক্রবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রথম ফোন আসে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে- হাউজ ফুল।
১০টা ৩০ মিনিটে মধুমিতা থেকে ফোন- হাউজ ফুল। ১০টা ৪৫ মিনিটে বলাকা থেকে ফোন- হাউজ ফুল।
তারপর দেশের একে একে ২৯টি সিনামা হলে সারাদিনে ৫টি করে শো হাউজ ফুল। আজ সেই কথা মনে পড়ছে বারবার।’
Advertisement
তিনি তার সিনেমার নায়ক-নায়িকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘রিয়াজ ভাই, পূর্নিমা, তুহিন ভাইসহ হৃদয়ের কথার পুরো পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ সরল দর্শকদের কাছে। আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি। জানি না এমন দিন আর কোনো দিন আসবে কিনা।’
ছবিটি নিয়ে রিয়াজ বলেন, ‘দেখতে দেখতে ১৪ বছর কেটে গেল। এ ছবির এক দশক পূর্তিতেও জাগো নিউজে কথা বলেছিলাম। আসলে অনুভূতিটা একই। পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারলে সাফল্য খুব একটা কঠিন হয় না। আমরা ছবিটি নির্মাণের আগে অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম। চেয়েছিলাম, ছবিতে এমন কিছু থাকবে যা দর্শককে হলে আনবে। এমন কিছু গান করবো যেগুলো শহরের প্রাইভেটকারগুলোতে বাজবে।
এর কারণ হলো তখন বাংলা ছবি নিয়ে একটু শিক্ষিত মানুষগুলোর মধ্যে নেতিবাচক একটা ধারণা ছিল। আমরা সেটি করতে পেরেছিলাম। প্রাইভেটকার তো বটেই, সব শ্রেণির মানুষের কাছেই পৌঁছেছিল হাবিব ওয়াহিদের গানটি। অন্য গানগুলোরও জনপ্রিয়তা ছিলে আকাশছোঁয়া।’
নতুন করে আবার কোনো ‘হৃদয়ের কথা’ কেন নির্মাণ করা গেল না- এ প্রশ্নের জবাবে রিয়াজ বলেন, “আমরা চেষ্টা যে করিনি তা নয়। কিন্তু চাইলেই হৃদয়ের কথা নির্মাণ করা যায় না। তেমন কোনো গল্প এখন পর্যন্ত পাইনি। গল্প সার্বজনীন না হলে ‘হৃদয়ের কথা’ বানানো যায় না। আমি এখনো অপেক্ষায় আছি সেই গল্পের দেখা পাবো বলে।”
এলএ/এমএস