বিশেষ প্রতিবেদন

অবাধ গণতন্ত্র : কে শুনে কার কথা

সকাল পৌনে ১১টা, জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতর ও সামনের রাস্তার একাধিক মাইক থেকে ভেসে আসছে নারী-পুরুষের জ্বালাময়ী বক্তৃতা। বিভিন্ন দাবিতে একই সময় কমপক্ষে ছয়টি সংগঠনের অনুষ্ঠান চলছে। কয়েকশ’ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে রাস্তায় রীতিমতো যানজটের সৃষ্টি। প্রত্যেক সংগঠনের নেতারা মাইক হাতে বিরামহীনভাবে বক্তব্য করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একাধিক মাইকের একসঙ্গে আওয়াজে কে কী বলছিলেন তা বুঝতে পারছিলেন না কেউ!ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বাস, রিকশা, মোটরসাইকেল ও মোটরগাড়ির আরোহীরা বার বার উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করছিলেন -কোথা থেকে কে কী বক্তব্য দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ মুচকি হেসে পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকালে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায়।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেখেন অবাধ গণতন্ত্রের নমুনা, সবাই এক সঙ্গে বক্তৃতা করছেন, কেউ কারও কথা শুনছে না। এমনটা শুধুমাত্র এ দেশেই সম্ভব।এ সময় কিছু তরুণকে (দাড়ি গোফও গজায়নি) দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, এদের সবাই নগদ টাকায় ভাড়া করে আনা কর্মী।কৌতুহলবশত প্রেসক্লাবের দিকে এগিয়ে গেলে এ প্রতিবেদক দেখতে পান ফুটওভার ব্রিজের নিচে দ্য ঢাকা ডাইং গার্মেন্টসের ১৬১ জন শ্রমিককে বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ ও তাদের পুনর্বহালের দাবিতে গামেন্টর্স শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন (জিডব্লিউএসএফ) এর বক্তৃতা চলছে। লাল পতাকা হাতে নিয়ে শ্লোগান তুলছেন কর্মীরা।প্রেসক্লাবের মূল ফটকের সামনে ফেনী সদর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও  শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধনে বক্তৃতা চলছে। তার ঠিক পাশেই নাগরিক ঐক্য ফোরামের জেলবন্দি নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নাগরিক নারী ঐক্যর মানববন্ধন।একই সময়ে নিরাপত্তা, বাঁচার মতো মজুরি কারখানায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমাবেশ, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের অবস্থান ধর্মঘট চলছিল। এছাড়া প্রেসক্লাবের ভিতরে অডিটরিয়ামে সে সময় চলছিল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ঢাকা মহানগরীর দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন-২০১৫।অবস্থান ধর্মঘট পালনরত একজন শিক্ষক বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখানে যেন সার্কাসের খেলা চলছে।এমইউ/আরএস/এমএস

Advertisement