ভ্রমণ

বান্দরবানের আসল সৌন্দর্য যেখানে

করোনার কারণে ঘরবন্দি জীবন কারই বা ভালো লাগে। যে কারণে তিন বন্ধু রাতে মেসেঞ্জারের আড্ডায় হুটহাট পরিকল্পনা করে ফেললাম। অনেক তো হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা হলো, এবার একটু তিন-চারদিনের একটা ট্রিপ দিলে মন্দ হয় না। একজন বলল, ‘চল, রাঙ্গামাটি যাই’। আরেকজন বলল, ‘কক্সবাজার যাই’। আমি বললাম, ‘এক জায়গায় আর কত যাবি? আমার পুরোনো জায়গায় বারবার যেতে ভালো লাগে না।’ নতুন নতুন প্লেস দেখা আর ঘোরার শখ আমার আগে থেকেই। তাই লোকেশন ঠিক করার দায়িত্বটা আমার কাঁধেই এসে পড়লো।

Advertisement

বলে রাখা ভালো, যে দুই বন্ধুর কথা বলছিলাম, তারা হলো চট্টগ্রামের স্থানীয়। আমি ঢাকায় থাকি। পড়ালেখার সুবাদে তাদের সাথে পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব, যেন আপন ভাইয়ের মতো। অবশেষে প্লান ঠিক করে ফেললাম, আমরা বান্দরবান যাচ্ছি। যদিও এর আগে বান্দরবান যাওয়া হয়েছে দুবার। প্রথমেই বলে নেই, বান্দরবান বলতে অনেকেই নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, সাঙ্গু নদী- এসবই বোঝেন। কিন্তু বান্দরবানের মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে বান্দরবানের ভেতরের দিকে।

এক বড় ভাই বলেছিলেন, ‘তরুণ বয়সে এসব জায়গায় না ঘুরলে পরে আর পারবি না।’ আপনি যদি পাহাড়ে উঠতে ভয় পান কিংবা পাহাড়ে ওঠার ইচ্ছা বা চেষ্টা না থাকে। আপনি যদি প্রচুর হাঁটতে না পারেন, টানা ১৪-১৫ ঘণ্টা জার্নি করতে না পারেন, তবে এ জায়গা আপনার জন্য নয়।

তারপর মনে পড়ে গেল, এলাকার বড় ভাই শিমুল ভাইয়ের কথা। তিনিও না কি বান্দরবান যাবেন আটজনের একটি টিম নিয়ে। মনে মনে খুশিই হলাম। ভাইকে বললাম, ‘আমরা তিনজন আছি বান্দরবান যাবো।’ ভাই বললেন, ‘কোনো সমস্যাই নেই।’ ভাইকে বললাম, ‘কোন কোন জায়গায় যাচ্ছি তাহলে?’ তিনি বললেন, ‘এবার বান্দরবানের ভেতরের দিকে বগালেক, কেওক্রাডং, চিংড়ি ঝরনা, তংমে পাহাড়, রুমা বাজার, কমলা বাজার, দার্জিলিং পাড়া যাচ্ছি।’ তারপর ভাইকে বললাম, ‘ঢাকা থেকে আমিসহ বাকি আটজনের টিকিট কেটে রাখেন। বাকি দু’জন বান্দরবান থেকে মিলিত হবে আমাদের সাথে।’ ভাই ৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা টু বান্দরবানের টিকিট কেটে রাখলেন।

Advertisement

টিকিট কাটার পর্ব শেষ করে চট্টগ্রামের দু’জনকে ফোন করে বললাম, ‘তোরা দু’জন বৃহস্পতিবার রাতেই বান্দরবান গিয়ে একটি হোটেল বুক করে একরাত থাকলেই হবে। আমরা শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যেই বান্দরবান থাকবো।’

অফিস করি আর মনে মনে একটি উৎসাহ কাজ করে। কবে যে বৃহস্পতিবার আসবে। বাসায় গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম। কারণ কালই যে সেই অপেক্ষার দিন। যথারীতি বৃহস্পতিবার সকালের অফিস শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম সায়েদাবাদের উদ্দেশে। শিমুল ভাইকে কল করে বললাম, ‘চলে আসছেন না কি?’ ভাই বললেন, ‘সবাই চলে এসেছে শুধু আপনিই বাকি।’

এদিকে চট্টগ্রামের দু’জন তো আরও বেশি এক্সাইটেড। তারা বান্দরবান গিয়ে রুম বুক করে আমাকে ভিডিও করে পাঠিয়ে জ্বালা বাড়িয়ে দিচ্ছে বারবার। তারপর সায়েদাবাদ চলে এসে শিমুল ভাইয়ের সাথে দেখা করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। একপর্যায়ে বাসও চলে এলো। আমরা ৯ জন যে যার সিটে বসে পড়লাম। বলে রাখা ভালো, শিমুল ভাইয়ের সাথে আসা ৭ জনের একজনকেও আমি চিনি না। তাই তারাও আমাকে দেখছে, আমিও তাদের দেখছি।

কিভাবে পরিচিত হব তাদের সাথে, তা বুঝে ওঠার আগেই বাস কুমিল্লায় ২০ মিনিটের ব্রেক দিলো। আমিও তেমন কথা না বলেই বাস থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে একটা কফি খেয়ে বাসে উঠে গেলাম। বাস আগের মতই চলছে। মনের ভেতর শুধু একটাই প্রশ্ন, ৩ দিন এদের সাথে থাকবো, এদের সাথে পরিচিত হওয়া দরকার। ভাবতে ভাবতেই চলে গেলাম বান্দরবান।

Advertisement

বাস থেকে নেমে ফ্রেশ আর সকালের নাস্তা করার জন্য চলে গেলাম হোটেল হিল ভিউতে। শিমুল ভাই বললেন, ‘আপনার সাথের দুই জনকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেন। আমরা বেশিক্ষণ থাকবো না এখানে।’ আমিও দেরি না করে তাদের কল দিলাম। যারা আমাকে সারারাত ভিডিও কলে জ্বালাতন করে এখন ঘুমাচ্ছে। কল দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করে বলল, তারা না কি রেডি হয়ে বসে আছে আমার কলের অপেক্ষায়। তাই আমি আর কথা না বাড়িয়ে হোটেল হিল ভিউতে চলে আসতে বললাম। তারাও ১০ মিনিটের মধ্যে চলে এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘কতদিন পর আবার একসাথে তাই না?’ আমিও বললাম, ‘এবার কিন্তু আমরা ৩ জন নই। আমরা এখন ১১ জনের একটা বিশাল টিম।’ তাদের দু’জনকে শিমুল ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারা শিমুল ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘বাকিদের সাথে পরিচিত হব কিভাবে?’ আমি মনে মনে হাসি। আমিই পরিচিত হতে পারলাম না আর তোরা। যাক ওদের অভয় দিয়ে বললাম, আগে নাস্তা কর। তারপর বান্দরবান যেতে যেতে পরিচয় হয়ে যাবে।

নাস্তা শেষ করে সবাই ব্যাগ নিয়ে উঠে গেলাম আগে থেকেই ঠিক করে রাখা চান্দের গাড়িতে। চান্দের গাড়ির ড্রাইভার সজিব এখনো যুবক। খুব ভালো গাড়ি চালায়। পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ যেন তার মুখস্থ। সবাই এখন সামনাসামনি, সবার মুখোমুখি। একে অপরের দিকে তাকিয়ে কোনো এক ঘটনা বলে হাসাহাসি করছি। সবই ঠিকঠাক কিন্তু আমার দুই ফ্রেন্ড যখন তাদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে; তখন বাকিরা হা করে তাদের কথা শোনে কিন্তু কিছুই বোঝে না। যখন তারাও দেখলো, তাদের ভাষা সবাই বুঝছে না; তখন তারাও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করতে লাগলো। আমি যদিও পুরোপুরি বুঝি না। তারপরও তাদের সাথে থেকে থেকে ৭৫% আয়ত্ত করে ফেলেছি। তবে মজার বিষয় হলো, চট্টগ্রামের দু’জনের কথায় কেউ বোরিং হচ্ছে না। বরং বাকিরা আরও কৌতূহল নিয়ে শুনছেন।

তারপর একে একে সবার সাথে পরিচিত হচ্চিলাম। প্রথমেই বলি, দুই কাপল ছিল আমাদের মধ্যে। প্রথম কাপল প্রিয়ন্তি আপু আর আসাদ ভাই। তারা দু’জনই খুব ভালো মানুষ। তারা ঢাকায় থাকেন, জব করেন। দ্বিতীয় কাপল ত্রয়া এবং ইয়াসির। তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই, তারা কাপল। তবে তারা দু’জনই খুব কিউট আর অসাধারণ মানুষ। তারা পেশায় স্টুডেন্ট।

এই গেল ৪ জনের পরিচয়। ৫ম জনের নাম ছিল হিমা। সে-ও ঢাকাবাসী। পেশায় স্টুডেন্ট। ৬ষ্ঠ জনের নাম মবিন ভাই, সে সাভার থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছিল। খুব ফুরফুরে মেজাজের এবং ভ্রমণপ্রিয় মানুষ, পেশায় স্টুডেন্ট। ৭ম জন ড্রাইভারের সাথে বসেছিল সামনের সিটে। নাম তার আকরাম। সেও পেশায় স্টুডেন্ট। বাকি থাকলাম ৪ জন- আমি, শিমুল ভাই, আমার বন্ধু মিজান ও পারভেজ। মিজান ও পারভেজ পড়ালেখা শেষ করে চট্টগ্রামে চাকরি করে। শিমুল ভাই এবং আমি পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় জব করি।

পরিচিত হয়ে গল্প করতে করতে রুমা বাজারের মাঝামাঝি চলে এসেছি আমরা। তারপর দেখি ড্রাইভার চাঁদের গাড়ি থামিয়ে সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে যেতে বললেন। আমাদের সবার জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক আছে কি না, তা চেক করেই না কি ছেড়ে দেওয়া হবে। যে যার মত নেমে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে চেকআপ শেষ করে গাড়িতে চলে এলাম। এরকম চেকইন না কি আরও ৪ বার আছে কেওক্রাডং যেতে।

তিন ঘণ্টা বা আরেকটু বেশি সময় লাগে রুমা বাজার পৌঁছতে। সেখানে আগেই শিমুল ভাই গাইড ভাড়া করে রেখেছিলেন। গাইড ছাড়া রুমা বাজার থেকে ভেতরের দিকে যাওয়া যায় না। এটি আর্মি কর্তৃক নির্দেশিত। গাইড আগে থেকে ঠিক করে যাওয়া ভালো। রুমা বাজারে প্রত্যেকের বিস্তারিত তথ্য আর্মি ক্যাম্পে লিখে জমা দিয়ে সাইন করে ইন হতে হয়। পাঁচটার পর আর বগা লেকের উদ্দেশে ইন হওয়া যায় না। আর্মি ক্যাম্পে সবার তথ্য জমা দিয়ে রুমা বাজারের স্থানীয় আদিবাসীদের হাতে বানানো লেবু এবং মাল্টার শরবত খেলাম। দারুন স্বাদ, ভোলার মতো নয়।

বগা লেক যাওয়ার আগে বাজার একটাই। রুমা বাজার থেকে সবাই যে যার মত ট্রাকিং স্যু, রোদ থেকে বাঁচার জন্য ক্যাপ, আরও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিচ্ছিল। আমি সব আগে থেকেই কিনে নিয়েছিলাম ঢাকা থেকে। তবে রুমা বাজারে ঘোরার সময় আমার চোখ গেল পাহাড়ি পেঁপের দিকে। সেই লাল পাকা পেঁপে। দেখে মনে হচ্ছে, এখনই খেয়ে ফেলি। যেই কথা সেই কাজ। দুইটা ওজন দিতে বললাম, ওজন দিয়ে এক পিস পেঁপে মুখে দেওয়ার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল, এত মজার পেঁপে মনে হয় এর আগে খাইনি।

এর থেকে মজার বিষয় হলো, সেখানে পাকা পেঁপের কেজি মাত্র ১৫ টাকা। এটা দেখে লোভ সামলাতে না পেরে আরও ৪টা পেঁপে কিনে গাড়িতে রেখে দিলাম বগা লেক গিয়ে খাবো বলে। আমাদের গাইড মুনথাং, অসাধারণ ভালো মানুষ। রুমা বাজারের পর মোবাইলের নেট পাওয়া যায় না ঠিকমতো। তাই আম্মুকে কল করে বলে দিলাম, ২-৩ দিন নেটের বাইরে থাকব, টেনশন যেন না করে। নেট পেলেই আবার কল করবো। আম্মু একটু গম্ভীর গলায় বললেন, ‘ঠিক আছে, সাবধানে থাকিস। চোখ-কান খোলা রাখিস।’

রুমা বাজারের সব কাজ শেষ করে আমরা যাচ্ছি বগা লেকের দিকে। পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পথে যতই সামনের দিকে যাচ্ছি; ততই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। এ যেন বাস্তবে থেকেও স্বপ্নের মধ্যে আছি। একমুহূর্ত বোর হওয়ার সুযোগ নেই। বাকি ট্যুরমেট কেউ ভিডিও করছে, কেউ মনের সুখে গান গাইছে। আমরা সবাই যেন ইট-কাঠের জগত ছেড়ে অন্য জগতে আছি। রুমা থেকে বগা লেকের মাঝে একবার চেকইন হয়েছিল। চলতে চলতে প্রায় চলে এসেছি স্বপ্নের বগা লেকে।

পাহাড়ের ওপর একটি ছবির মতো গ্রাম, তার পাশেই বগা লেক। বিশালাকৃতির এ লেক দেখে এ বিশাল ভ্রমণ সার্থক মনে হবে। এখানে ঢুকেই পাশের আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করতে হবে। লেকটির সৃষ্টি নিয়ে বেশ কিছু মিথ রয়েছে, স্থানীয়রা বলতে পারবেন। তবে কেউই সঠিক জানে না কীভাবে এ বিশাল পাহাড়ের খাঁজে এর সৃষ্টি হয়েছে। গভীরতা প্রায় ১৫০-২০০ ফুট। একদম লেকের গা ঘেঁষে তিন-চারটা কটেজ রয়েছে। সেগুলো থেকে একটা নিয়েছিলাম আমরা। ব্যালকনি থেকে লেক দেখার অনুভূতিই আলাদা।

সবাই রুমে ঢুকে জামা-কাপড় নিয়ে সোজা নেমে গেলাম স্বচ্ছ লেকের পানিতে ডুব দিতে। আহ, এমন প্রশান্তি যেন আর কিছুতেই নেই। কেউ কেউ তো গোসল থেকে উঠবেই না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। পরে আমাদের গাইড মুনথাং দুপুরে খাবারের আয়োজন শেষ করে ডাক দেওয়ার সাথে সাথে সবাই গোসল শেষ করে খাওয়ার টেবিলে চলে গেলাম।

পাহাড়ি উপজাতিদের হাতের রান্না কেমন হবে, তা ভাবতে ভাবতে কখন যে ২-৩ প্লেট খেয়ে ফেলেছি; তা ভাবতে গেলে আবারও জিভে জল চলে আসে। তবে খাওয়ার মধ্যে সবই নতুন আইটেম ছিল। বাঁশের কোরাল, আলুভর্তা, পেঁয়াজ ভর্তা (ঝাল), আদাফুল ভর্তা (বোম্বাই মরিচের চেয়ে বেশি ঝাল), কুমড়া ভাজি, পাহাড়ি মোরগ আর ডাল।

খাওয়া শেষ করে টেবিলে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে গেলাম পাহাড়ি পান খেতে পাশের এক দোকানে। এক আপু খুব সুন্দর করে পান বিক্রি করছেন। আমার দেখাদেখি ট্যুরমেট আরও দু’জন চলে এলো পান খেতে। পান মুখে দিয়ে সোজা চলে গেলাম বগা লেকের পাশে আড্ডা দেওয়ার জন্য। অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর পুরো পাড়াটা ঘুরে দেখার শখ জেগে উঠলো মনের মধ্যে। আমার বন্ধু দু’জন আর ট্যুরমেট ৩ জনকে নিয়ে পুরো পাড়া ঘুরতে লাগলাম। কী বিচিত্র আর সহজ-সরল তাদের জীবনযাপন। পুরো পাড়া ঘুরে আর অপূর্ব লেক দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এলো বগা লেকজুড়ে।

এখানে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না। সন্ধ্যার পর সৌর বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। যেখানে খাবেন, সেখানে ফোন চার্জ দিতে পারবেন। যদিও নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না খুব একটা। আর পর্যটক বেশি হলে জেনারেটর চালু করা হয়। এই গ্রামে ৩০টি উপজাতি পরিবার থাকে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে মনে পড়ে গেল রুমা বাজার থেকে আনা পেঁপের কথা। রুমে গিয়ে সবাইকে নিয়ে বসে গেলাম পেঁপে খেতে। আমি কেটে দিচ্ছি, সবাই খাচ্ছে। সে কী অনুভূতি, সে কী স্বাদ। পেঁপে খাওয়া শেষ হতে না হতে ঝুমঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। এ যেন এক শান্তির উপর আরেক প্রশান্তি।

কটেজের ব্যালকনি থেকে হাত দিয়ে যতটুকু পারছিলাম, বৃষ্টি ছুঁয়ে নিজের সাধ মিটিয়ে নিচ্ছিলাম। বৃষ্টি শেষ হতে না হতেই এক দারুণ খবর দিলেন শিমুল ভাই। আজ রাতের খাবার না কি চিকেন বার-বি-কিউ। একের পর এক মজার খাবার, এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত। যাক আমরা কটেজ থেকে বের হয়ে চলে গেলাম বার-বি-কিউ স্পটে। সেখানে গিয়ে গান-বাজনা, নাচানাচি করছিলাম। সাথে চাও খেয়ে নিচ্ছিলাম একটু পরপর।

সকালেও যে মানুষদের সাথে আমি পরিচিত হতে পারবো কি না ভেবে মন ব্যাকুল ছিল, তারা যেন এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমার পরিবারের মানুষের মতই আপন হয়ে গেল। বার-বি-কিউয়ের সব কাজ গাইড মুনথাং শেষ করে আমাদের পরিবেশন করে দিলেন। কী স্বাদ। ৪-৫টা পরোটা অনায়েসে খেয়ে ফেললাম। খাওয়া শেষ করে সবাই চলে গেলাম বগা লেকের একপাশে। যে যার মতো গলা ছেড়ে গান ধরলাম, ‘একখান পান চাইলাম পান দিলে না, তোমার শনে কিসের পিরিতি...’

চাঁদের আলোয় আমাদের হালকা হালকা দেখা গেলেও আড্ডায় কোনো কমতি ছিল না। আড্ডা শেষ করে সবাই চললাম লেকের পাশে সেই কটেজের কাছে। আমার আবার রাতে ফ্রেশ না হলে ঘুম আসে না, ফ্রেন্ড একজনকে নিয়ে বগা লেকে হালকা একটা ডুব দিয়ে, ফ্রেশ মুড নিয়ে চলে গেলাম রুমে। রুমে গিয়ে বিছানা ঠিক করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ সকালে যে আবার উঠতে হবে তাড়াতাড়ি। যেতে হবে যে চিংড়ি ঝরনা, দার্জিলিং পাড়া এবং কেওক্রাডং।

এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরও পাইনি।

চলবে...

এসইউ/এএ/এমকেএইচ