শরীয়তপুর জেলায় উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে গেছে ভেরণ বা ভেন্নার চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও একটা সময়ে শরীয়তপুর জেলার ছয়টি উপজেলাতে প্রচুর পরিমাণে ভেরণ বা ভেন্নার চাষ করা হতো। যা ভাঙিয়ে আমাদের দেশের গরীব চাষিরা দৈনন্দিন জীবনে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতো। কিন্তু বর্তমানে সয়াবিন তেলের প্রচলনে তা এখন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সয়াবিন তেলের তুলনায় ভেরণ তেলের পুষ্টিমান কোনো অংশেই কম নয়। উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। যদি কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে সয়াবিন তৈলের উপর নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের উৎপাদিত ফসলের কদর বাড়বে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর গ্রামের কৃষক সুলতান সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আগে আমরা মাঠে ভেরন চাষ করতাম। কিন্তু এখন আর সেভাবে চাষ করা হয় না। এখন আমরা আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ির আশপাশেই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় চাষ করি। কারণ আগে ভেরন ভাঙানোর জন্য আমাদের অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ঘানি ছিল। এখন বর্তমানে একটা ঘানিও নেই। আমাদের যা ভেরন চাষ হয় তা ভাঙাতে আমাদেরকে চাঁদপুর যেতে হয়। যার প্রেক্ষিতে আগের তুলনায় ভেরন চাষ আমরা কম করছি। যদিও সরিষা তেলের তুলনায় ভেরনে তেলের পরিমাণ অনেক বেশি এবং উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। তথাপি আমরা যাতায়াতের সমস্যার কারণে পরিপূর্ণভাবে ভেরন চাষ করছি না।নড়িয়া উপজেলার গুলমাইজ গ্রামের কৃষক আবু তাহের জাগো নিউজকে বলেন, আগে আমরা প্রচুর ভেরন চাষ করতাম। এখন আর বেশি চাষ করা হয় না। ঘরের পাশে চার পাঁচটা গাছ লাগিয়েছি। এগুলো আমরা সরিষার সঙ্গে মিশিয়ে ভাঙিয়ে নিয়ে আসি। এতেই আমার হয়ে যায়। আর তাছাড়া ভেরনের গাছে আমাদের লাকড়ির চাহিদা পূরণ হয়।জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর গ্রামের কৃষক মানিক ফকির জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রতি বছরই কম বেশি ভেরনের চাষ করি। ভেরন চাষ করলে আমাদের দুইটি সুবিধা রয়েছে। একদিকে আমাদের তেলের চাহিদা পূরণ হয়, অন্যদিকে আমাদের লাকড়ির চাহিদা পূরণ হয়। মূলত আমরা লাকরির চাহিদা পূরণের জন্যই ভেরন চাষ করি। আর এ ব্যাপারে সরকার আমাদের কোনো সহযোগিতা করে না। সরকার যদি আমাদেরকে ভেরন চাষের জন্য সহযোগিতা করতেন তাহলে আমরা উৎসাহ নিয়েই ভেরন চাষ করতাম।একই গ্রামের কৃষক আলতাব মাঝি বলেন, ভেরন চাষ করে আমাদের লাভ কি ? এখন এগুলো বাজারে চলে না। আগে যাও একটু চাষ করতাম এখন আর করি না।সদর উপজেলার উত্তর বালুচরা গ্রামের কৃষক আঃ আজিজ সিকদার বলেন, আগে আমরা সরিষার পাশাপাশি ভেরনের চাষও করতাম । সরিষার সাথে ভেরন মিশিয়ে ভাঙালে তেলের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। কিন্তু বর্তমানে জমি সঙ্কটের জন্য আলাদাভাবে ভেরনের চাষ করা হচ্ছে না। এখন আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুসারে বাড়ির আশপাশে চার-পাঁচটি গাছ লাগিয়েছি।এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঐতিহ্যগতভাবেই এ অঞ্চলে প্রচুর ভেরন চাষ হত এ ব্যপারটি আমি জানি। কিন্তু সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে মানুষ এখন ভেরন রেখে সরিষার উপর ঝুঁকে পড়েছেন। পাশপাশি সয়াবিন তেলও বাজার দখল করে নিয়েছে। আমরা প্রায়ই কৃষকদেরকে ভেরন চাষের জন্য উৎসাহিত করি। সরকারের কাছে আমি এ ব্যাপারে লিখেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভেরন চাষের জন্য কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করার কোনো চিঠি আসেনি। মো. ছগির হোসেন/এমজেড/পিআর
Advertisement