নওগাঁয় জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দুইগুণ বেশি আসামি রাখা হয়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে আসামি বেশি থাকা ও খাবারে কোনো ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানান কারাগার কর্তৃপক্ষ। কারাগারের ৫৮৭ জন আসামি ধারণ ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে আছে ১৩৯৯ জন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশে অস্থিরতা বিরাজ করলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ধড়পাকড়ের কারণে হঠাৎ জেলে আসামিদের সংখ্যা বেড়ে যায়। কারাগারে আসামিদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় থাকা ও খাওয়ার অসুবিধা হচ্ছে বলে জানান আসামিরা। জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে ১২ একর জায়গা জুড়ে নওগাঁ শহরের বাইপাস এলাকায় নতুন কারাগার তৈরি হয়। আসামি ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয় ৫৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৬৫ জন এবং নারী ২২ জন। ধারণ ক্ষমতা ৫৮৭ জন থাকলেও জেলা কারাগারে রয়েছে ১৩৯৯ জন আসামি। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৩৩৭ জন এবং নারী ৬২ জন।এছাড়াও জেলা কারাগারে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে ৪৬ জন, জেএমবি সাত জন, বিডিআর বিদ্রোহী ২৪ জন, দুদকের মামলায় দু্জন এবং অন্যান্য মামালার আসামি রয়েছে ১৩২০ জন।আসামিদের জন্য প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচ ৪৫ টাকা। আসামিদের খাবার দেয়া হয় সকালে রুটি ও গুড়, দুপুরে ভাত, সবজি ও ডাল এবং রাতে ভাত, মাছ বা মাংস। প্রতি সপ্তাহে খাবারের তালিকা পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া বিশেষ দিনগুলোতে সকালে পায়েস ও মুড়ি, দুপুরে ভাত ও রুই মাছ এবং রাতে পোলাও, গরু, খাসির মাংস, ড্রিংকস, দই-মিষ্টি ও পান সুপারি খাবার দেয়া হয়।তবে গত বছর আসামিদের মাথাপিছু খরচ ছিল ১২৫ টাকা। বছরে দুবার জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠিকাদারদের মাধ্যমে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্ধারণ করা হয়। যেখানে সর্বনিম্ন দর যে ঠিকাদার দেয় মূলত তাকেই টেন্ডার দেয়া হয় বলে জানা যায়।জায়াগার তুলনায় আসামি ধারণ ক্ষমতা বেশি। তার উপর আবার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বেশি। সেখানে আসামিদের প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচ ৪৫ টাকায় কিভাবে ভালো খাবার সম্ভব! স্বল্প টাকার খাবারে জেলা কারাগারে আসামিদের সমস্যা হচ্ছে। মান্দার বাসিন্দা আশরাফুল জাগো নিউজকে জানান, জেলা কারাগারে কারাগারে যাওয়ার দুইদিনের মধ্যে চুলকানি হয়েছে। জেলখানায় থাকার জায়গাটা অপরিস্কার থাকায় ছারপোকাও রয়েছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আজিম জাগো নিউজকে জানান, প্রায় এক মাস থেকে জেলা কারাগারে আছেন। খাবারের সমস্যাতো আছে, সেই সঙ্গে শুয়ে থাকারও সমস্যা। চর্মরোগ চুলকানির সমস্যাটা কারাগারে বেশি। এছাড়া কারাগারে থাকা জেলার মহাদেবপুরের রকিবুল হাসান, সেকেন্দার আলীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ধারণ ক্ষমতার তুলনায় আসামি বেশি রাখা হয়েছে। আসামি বেশি থাকার ফলে সেলে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। ফলে কিছুটা অসুবিধায় থাকতে হচ্ছে। এছাড়া খাবারও নিম্নমানের দেয়া হচ্ছে।পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বৃটিশদের সেই শাসনামল থেকে আজ অবধি চলছে তাদের এ নিয়মনীতি। বর্তমানে এ নিয়মনীতিকে পরিবর্তন করা দরকার। তিনি মনে করেন, কারাগারের নাম পরিবর্তন করে `সংশোধনাগার` নাম রাখা উচিত। অপরাধীরা বিভিন্ন অপরাধ করেন কিন্তু সংশোধন হওয়ার সুযোগ থাকছে না। দিন দিন অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। অপরাধীকে যখন কারাগারে রাখা হয় তার অপরাধ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন। এক্ষেত্রে কারাগারে সংশোধনাগার রাখতে হবে। অপরাধ সংশোধন হলে পরবর্তীতে কারাগারে আসার প্রয়োজন হবে না। নওগাঁ জেল সুপার মনির আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, ধারণ ক্ষমতার তুলনায় আসামি বেশি রয়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য জেলার তুলনায় এ কারাগারে আসামিরা অনেক ভালো আছেন। আসামিদের জন্য শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। ধারন ক্ষমতার বিষয়ে উপর মহলে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. মো: আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, অন্যান্য জেলার তুলনায় নওগাঁ জেলা কারাগারে আসামিরা ভালো আছেন। এছাড়া আসামিদের যেন কোনো সমস্যা না হয় এজন্য বার বার তদারকি করা হয়। তিনি আরো জানান, কারাগারে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় আসামি বেশি থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে উপর মহলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কারাগারে জায়গার পরিমানটা যেন আরো বাড়ানো হয় এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।আব্বাস আলী/এমজেড/পিআর
Advertisement