কৃষি ও প্রকৃতি

চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ মিষ্টি স্টেভিয়া চাষ করবেন যেভাবে

মনিরুজ্জামান কবির

Advertisement

স্টেভিয়া এক জাদুকরি ভেষজ উদ্ভিদ। সম্প্রতিকালে ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে এই গাছটি নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আগ্রহ সৃষ্টির মূলে রয়েছে এর মিষ্টতা। এ গাছের পাতার মিষ্টি উপাদান ঝঃবারড়ংরফব এ চিনির চেয়ে ২৫০-৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি স্টেভিয়া গাছের পাতার শুকনো সবুজ পাউডার যা চিনির চেয়ে ২৫-৩০ গুণ বেশি মিষ্টি। স্টেভিওসাইড গ্লাইকোসাইডে ক্যালরি না থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি কার্যকরী।

স্টেভিয়াতে থাকা প্রচুর ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। এ গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Stevia rebaundiana এবং এটি Astevceae পরিবারভুক্ত বহুবর্ষজীবী। গাছটি ৬০-৭০ মিটার লম্বা হয়। গাছটির আদি নিবাস প্যারাগুয়ে ও দক্ষিণ আমেরিকা। স্টেভিয়া নামটির নামকরণ করেন স্প্যানিশ বোটানিস্ট ড. পিটার জেমস ইস্টিভ। প্যারাগুয়ের রসায়নবিদ ড. রিবাউডি সর্বপ্রথম এ গাছের পাতা ও কাণ্ড থেকে মিষ্টতার যৌগ Stevioside পৃথক করেন। প্যারাগুয়ের স্থানীয় জনগণ এ গাছটিকে কা হি হি অর্থাৎ মধু গাছ হিসেবে ডাকে।

৭০ দশকের পর থেকে স্টেভিয়া প্রাকৃতিক ক্যালরিবিহীন মিষ্টি এবং ভেষজ গুণাগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। এরপর থেকে সারা বিশ্বে বিশেষত আমেরিকা, কানাডা, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড এটি ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়েছে। সম্প্রতিকালে আমাদের দেশেও এ গাছ ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে এবং এ গাছের পাউডার বাজারজাত করা হচ্ছে।

Advertisement

রোপণ পদ্ধতি: টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত স্টেভিয়ার ছোট চারা নিষ্কাশনযুক্ত দোঁআশ মাটিতে অথবা দোঁআশ ও জৈব সার মিশ্রিত ৮-১০ ইঞ্চি মাটি টবে সারা বছর রোপণ করা যায়। এ গাছের টব রৌদ্রযুক্ত বারান্দায় বা ছাদে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন একবার পানি দিতে হবে। গাছের চারা রোপণের ২৫-৩০ দিন পর থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল আসার ২৫-৩০ দিন পর থেকে উপরের অংশ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় এবং পরে গাছের গোড়া থেকে একসঙ্গে অনেক চারা বের হয়, যত্ন করলে ওই চারাগুলো বড় হতে থাকে এবং ২০-২৫ দিন পর থেকে পুনরায় পাতা সংগ্রহ করা যায়।

ব্যবহার পদ্ধতি: স্টেভিয়ার সবুজ ও শুকনা পাতা সরাসরি চিবিয়ে এবং চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। পাতার গুঁড়ো দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করেও ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। এছাড়াও পানের সঙ্গে শুকনা পাতার গুঁড়ো খেতে পারেন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ গ্রহণ মাত্রা দুবারে ১০-১২টি পাতা অথবা শুকনা পাতার গুঁড়ো আধা চা চামচ।

গুণাগুণ: ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। যকৃৎ, অগ্ন্যাশয় ও প্লীহায় পুষ্টি সরবরাহ করে। স্টেভিওসাইড অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে। ত্বকের ক্ষত নিরাময় এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। খাদ্য হজমে সহায়তা করে। মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে সবাই খেতে পারেন।

লেখক: ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়, বরিশাল।mkabir1986@gmail.com

Advertisement

এমএমএফ/এসইউ/এএ/পিআর