আন্তর্জাতিক

কোন পথে মিয়ানমার?

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সেনা শাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারে আগামী রোববার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দল বিজয়ী হলে প্রেসিডেন্ট না হয়েও তিনি সরকার পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশটিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।সেনাশাসন থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসার এ পদক্ষেপে দেশটির একটি বৃহৎ অংশকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছে। ৫০ লাখ মুসলিম বসবাস করছে মিয়ানমারে। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ থেকে ১০ ভাগ। নির্বাচনে অংশ নিতে অন্তত ৯০ টি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছে। তবে কোনো দল থেকে মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এবারের নির্বাচনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ভোট দিতে পারবে না। এছাড়া মুসলিম ভোটারদেরকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে তারা যেন ভোটকেন্দ্রে না যান। সু চি বৃহস্পতিবার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার দল বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে আগাম ভোটের তথ্য পেয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন সু চির ওই সংবাদ সম্মেলনে। এ সময় আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমালোচনার কথা স্মরণ করে দেয়া হলে সুচি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিয়ে অতিরঞ্জিত করা ঠিক হবে না।ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীদের ওপর হামলা ও সহিংসতার আশঙ্কায় দেশটির বেশ কিছু এলাকায় নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতায় অন্তত দুই শতাধিক মুসলিম নিহত হয়েছে। এছাড়া গৃহহীন হয়ে পড়েছে আরো এক লাখ ২৪ হাজার।

Advertisement

এসব বিষয়ে একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করেছেন সু চি। সংখ্যালঘু এসব লোকজনকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের ধোঁয়া তোলা সু চিকে নিয়ে তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি বৃহৎ গোষ্ঠীর বিষয়ে সু চির নীরবতা গণতন্ত্রের ফাঁপা বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়া দেশের একটি বড় অংশকে বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে যাত্রা শুরুর প্রত্যাশাও অনেকের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।এদিকে, নির্বাচনের আগে সম্প্রতি দেশটির বেশ কয়েকটি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করেছে মিয়ানমার সরকার। এসব গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। তবে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী ওই চুক্তিতে অংশ নেয়নি। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কাচিন বিদ্রোহীরা এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই গোষ্ঠীটি ওই অঞ্চলে নির্বাচন বানচাল করতে মরণ কামড় দিতে পারে তা বলাই যায়। এরকম আরো কয়েকটি গোষ্ঠী স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে বিদ্রোহে লিপ্ত আছে। তারা একেবারেই কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেবে এরকম আশা করাটাকে দূরাশা বলাই যায়।মিয়ানমারের অবস্থানরত বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীরা আভাস দিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সু চির এনএলডির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) পার্টিও জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে আছে। কেননা দেশটির বিভিন্ন এলাকায় এনএলডির নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় হামলার শিকার হয়েছেন। এজন্য এনএলডি নেতারা ক্ষমতাসীন দলকে অভিযুক্ত করেছে।এছাড়া মিয়ানমারের গণমাধ্যমও স্বাধীন নয়। দীর্ঘদিন সেনা নজরদারিতে থাকা এসব গণমাধ্যমের অধিকাংশই সরকারের গুণগানে সবসময় মুখর। এখানেও যে ক্ষমতাসীন ইউএসডিপি পার্টি গণমাধ্যমের সমর্থন পাবে সে কথা বলাই বাহুল্য। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমারের এ অগ্রযাত্রা কতটা মধুর হবে তা সময়েই বলে দেবে।এসআইএস/এসএইচএস/আরআইপি