সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআইতে) স্থানান্তর করা হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এসএমপির পক্ষ থেকে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শনিবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রায়হানকে ধরে নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান।
তিনি সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার প্রথম দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা যান রায়হান।
Advertisement
বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। এ ঘটনায় রোববার রাত আড়াইটার দিকে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
মামলার পর সোমবার বিকেলে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে এসএমপির পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা চার পুলিশ সদস্য হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহারকৃত তিন পুলিশ সদস্য হলেন এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেন।
ঘটনার প্রথম দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিনতাইকালে নগরের কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে রোববার বিকেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
Advertisement
নিহতের স্ত্রীর দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কে বা কারা রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। এজাহারে রায়হান বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে যে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সেই নম্বরটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিনের মতো শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে তার স্বামী রায়হান কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রানির চেম্বারে যান।
পরদিন রোববার (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে (০১৭৮৩৫৬১১১১) মোবাইল নম্বর থেকে শাশুড়ির ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ। ওই মোবাইল ফোনটি ছিল কনস্টেবল তৌহিদ মিয়ার।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ফোনে রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে বলেন রায়হান। এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়ত্বিরত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছেন। যে পুলিশ সদস্য রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এ সময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ সদস্য।
পুলিশের কথামতো হাবিবুল্লাহ আবারও সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এরপর রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। এ সময় হাবিবুল্লাহ পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ দেখতে পান।
এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।
ছামির মাহমুদ/এএম/এমএস