খেলাধুলা

প্রতিপক্ষ দুর্বল, তবু ড্র করলেই খুশি আর্জেন্টিনা

ফিফা র‍্যাংকিং বলছে আর্জেন্টিনার অবস্থান নবম এবং প্রতিপক্ষ বলিভিয়া রয়েছে ৭৫ নম্বরে। নিজেদের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে ব্রাজিলের কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে বলিভিয়া। আজ (মঙ্গলবার) রাতে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হতে চলেছে এ দুই দল।

Advertisement

আর্জেন্টিনা ও বলিভিয়ার মুখোমুখি পরিসংখ্যান, অতীত সাফল্য কিংবা বর্তমান ফর্ম- যেকোনো হিসেবেই এগিয়ে থাকবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু খেলা যখন বলিভিয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অস্বাভাবিক উচ্চতার মাঠে, তখন বাকিসব হিসেবনিকেশ যেন নস্যি। সেখানে একমাত্র ফেবারিট দল বলিভিয়াই।

এখনও পর্যন্ত বলিভিয়ার বিপক্ষে সবমিলিয়ে ৩৮ ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা, জিতেছে ২৬টি আর ড্র হয়েছে ৫টি; বাকি ৭ ম্যাচের ফল গেছে প্রতিপক্ষের নামে। চিন্তার বিষয় হলো, এ ৭টি ম্যাচই ছিলো বলিভিয়ার মাঠে। অর্থাৎ নিরপেক্ষ ভেন্যু কিংবা নিজ দেশের মাঠে বলিভিয়ার মাঠে কখনও হারেনি আর্জেন্টিনা।

কিন্তু আলোচনায় যখন বলিভিয়ার মাঠ, তখন তাদের ঘরের ভেন্যুতে গিয়ে খেলা ১৩ ম্যাচের মধ্যে ৪টি জিতেছে আর্জেন্টিনা, ড্র হয়েছে ২টি ম্যাচ, পরাজয় মিলেছে বাকি ৭ ম্যাচে। এই ১৩ ম্যাচে নিজেরা ১৭ গোল দেয়ার বিপরীতে হজম করতে হয়েছে ২৭টি। নিকট অতীতের সবচেয়ে বিব্রতকর ৬-১ গোলের পরাজয়ও বলিভিয়ার মাঠেই দেখেছিল আর্জেন্টিনা।

Advertisement

এখন প্রশ্ন হলো, যে বলিভিয়ার বিপক্ষে নিরপেক্ষ ভেন্যু কিংবা নিজ দেশের মাঠে ফলাফল নিজেদের পক্ষে থাকে, সেখানে তাদের মাঠে গিয়েই কেনো সব উল্টো হয়ে যায়? এর কারণ সবচেয়ে বড় কারণ কন্ডিশন ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অস্বাভাবিক উচ্চতার সব মাঠ।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ হাজার ফিট উচ্চতায় অবস্থিত বলিভিয়ার মাঠগুলো। যেখানে খেলতে নামলে অনভ্যস্ততার কারণে অক্সিজেন লেভেল অনেক কমে যায় সফরকারী দলগুলোর। বলিভিয়ার নিজেদের ঘরের মাঠ হওয়ায় তাদের যেমন অভ্যস্ততা কাজ করে, সেটা থাকে সফরকারী দলগুলোর ক্ষেত্রে।

বলিভিয়ায় শেষবার খেলতে গিয়ে ম্যাচশেষে বমিই করে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। এবার এই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দুই দিন আগেই বলিভিয়া চলে গেছে আর্জেন্টিনা দল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ভালো সিদ্ধান্ত নয়। কেননা দুই-তিন দিন যাওয়ার পরই স্বাস্থ্যের ওপর কন্ডিশনের বিরূপ প্রভাব পড়তে সবচেয়ে বেশি পড়ে।

তাই এবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে গিয়ে খুব একটা আশাবাদী কিংবা সাহসী হতে পারছেন না আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। তার কথার সুরে স্পষ্ট, কোনোমতে হার এড়াতে পারলেই সেটিকে ইতিবাচক ফল হিসেবে নেবে আর্জেন্টিনা। তবে জয় না পেলে যে সন্তুষ্টি আসবে না- সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

ম্যাচে আর্জেন্টিনার লক্ষ্য কী জানতে চাওয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে স্কালোনি বলেছেন, ‘এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা কঠিন। যৌক্তিকভাবে এই মাঠে কিছু পাওয়াটাই ভালো ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, তাতে আমরা সন্তুষ্ট হবো না। আমরা জানি এখানে খেলা সর্বোচ্চ মাত্রার একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা লড়াই করব এবং ভালোভাবে শেষ করার চেষ্টা করব।’

বলিভিয়ার মাঠে আর্জেন্টিনার সবশেষ জয় দেড় দশক আগে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ২-১ গোলের জয় নিয়ে দেশে ফিরেছিল আর্জেন্টিনা। সেই দলের খেলোয়াড় ছিলেন বর্তমানে আর্জেন্টিনার কোচ হয়ে যাওয়া স্কালোনি। মেঘে মেঘে অনেক বেলা গেলেও, সেই জয়ের অভিজ্ঞতটা কাজে লাগানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

ম্যাচে নিজেদের পরিকল্পনার ব্যাপারে জানাতে গিয়ে স্কালোনির ভাষ্য, ‘দলের সম্ভাব্য সবটুকু শক্তি নিয়ে লড়াই করতে হবে। যত বেশি বল দখলে রাখা যাবে, তত ভালো। যখন আক্রমণ করা সম্ভব হবে তখনই আঘাত হানতে হবে। গোল করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। ২০০৫ সালে যখন আমরা জিতেছিলাম, তখন সেট পিস থেকে গোল করেছিলাম। ম্যাচের উল্লেখযোগ্য কিছু মুহূর্তে ঘটনাগুলো ঘটেছিল এবং তাতেই ফল নির্ধারণ হয়েছিল। এবারও তেমন পরিকল্পনায় জোর দিব আমরা।’

এসএএস/জেআইএম