প্রকৃতিতে আসতে শুরু করেছে শীতের আমেজ। সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করেই ‘প্রকৃতির ঘোমটা’ কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে মেঠোপথ। আর এর মধ্যেই শীতের উপাদেয় খাবার খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা।ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার তিন শতাধিক গাছি এখন দিনের বেশির ভাগ সময়টাই কাটান গাছে গাছে। যেন মাটিতে পা ফেলার ফুরসতটুকু নেই অভাবি গাছিদের।গাছই তো অন্নদাতা। তাকে যত্ন-আত্তি না করলে কি রস মিলবে ? আর রস না মিললে গুড়ও হবে না, হবে না পাটালি। তখন তো না খেয়ে থাকতে হবে বাপু, যেন একদমেই কথাগুলো বলেন কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের গাছি নজিউল্লাহ।তিনি বলেন, শীত আসা মাত্রই আমরা খেজুর গাছ ‘তোলার জন্য’ সকাল-সন্ধ্যা লেগে আছি। খেজুর গাছ আগের থেকে অনেক কমে গেছে। আগের মতো এখন বেশি রস সংগ্রহ হচ্ছে না।তবু নজিউল্লাহ এবার প্রায় এক পণ (৮০টি) খেজুর গাছ ইতোমধ্যে তোলা ও চাঁছার কাজ শেষ করেছেন।রস জাল দিতে যে পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না আক্ষেপ করে নজিউল্লাহ জানান, `যা আছে তা দিয়েই আমার পেশা চালিয়ে যাচ্ছি। বছরে পাঁচ মাস খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করি।`কেমন চলে পরিবার- এমন প্রশ্নের জবাবে পঞ্চাশোর্ধ নজিউল্লাহ বেশ একটু মুচকি হাসি দিয়েই বলেন, চলে যায়। কষ্ট হয় না।গাছিদের সঙ্গে আলাপ করে আরো জানা যায়, আশ্বিনের শুরু থেকেই তারা খেজুর গাছ তোলা ও পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটাই উপযুক্ত সময়। মাঘের `বাঘা শীতে` গুড় বিক্রির মধ্যদিয়ে শেষ হয় এ প্রক্রিয়া।সরেজমিনে জেলার কালীগঞ্জ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ব্যস্ত গাছিরা দা, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়) নিয়ে ছুটে চলেছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে।গাছিদের প্রক্রিয়াজাত করা খেজুরের গুড়, পাটালি বা রস দিয়েই কয়েকদিন পরেই মুখরোচক পিঠা, পুলি, পায়েস তৈরির ধুম পড়বে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে।শুধু কি তাই ? খেজুরের গুড় বা রস দিয়ে তৈরি মুড়ি, চিড়ার মোয়া শীতের সকালে লেপমুড়ি দেওয়া খাওয়ার মজা তো উপভোগ করেন আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই।এআরএ
Advertisement