দেশজুড়ে

এমএনডিপির ৭৯ সদস্যের আত্মসমর্পণ

বান্দরবানে ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টির (এমএনডিপি) ৭৯ সদস্য সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশা নিয়ে তারা অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্গম কুরুকপাতা বাজারে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা আত্মসমর্পণ করেন।আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন, সেনাবাহিনী ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সফিকুর রহমান, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা প্রমুখ। এ সময় মেনরুল এবং লোহব গ্রুপের ৭৯ এমএনডিপি সদস্য আত্মসর্মপণ করে।এর আগে বুধবার সেনাবাহিনীর কাছে গাদা বন্দুক ৫৫টি, পোশাক ৭৬টি, ৯৯ রাউন্ড গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জমা দেন এমএনডিপির সদস্যরা। দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা আত্মসমর্পণ করেন। দলের কর্মীদের পুনর্বাসনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসন এবং পরিষদের মাধ্যমে বাগান করার সুযোগ করে দেয়া হবে। এ রকম একটা প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আছেই।এর আগে ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টি (এমএনডিপি) সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আশা ব্যক্ত করলে গত ১৬ অক্টোবর এ লক্ষ্যে জেলার আলীকদম জোনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ম্রো আদিবাসীদের কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতার গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠকে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মাং সাই প্রু, অং প্রু ম্রো এবং এমএনডিপির প্রতিনিধি হিসেবে আলীকদমের স্থানীয় চারজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। পরে ২০ অক্টোবর সেনাবাহিনীর কাছে এমএনডিপি সদস্যদের আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে আবারও তারিখ পিছিয়ে যায়।ম্রো কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ংলক ম্রো জানান, তারা অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এখন এলাকায় শান্তি বিরাজ করবে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের কোনো এক সময় আলীকদম ও থানচি উপজেলার গহীন অরণ্যে স্বল্প সংখ্যক ম্রো যুবকদের নিয়েই গঠিত হয়েছিল ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টি (এমএনডিপি) নামের একটি সশস্ত্র সংগঠন। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী মিয়ানমার রাষ্ট্রেও ম্রো সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সংগঠন এমএনপি রয়েছে। অনেকটা একই আদলেই বান্দরবানের পাহাড়ে এমএনডিপি গড়ে তোলা হয়েছিল। আর এ সংগঠনের প্রধান ছিলেন মেনরুন ম্রো।সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথম দিকে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে কথা বলা হলেও ২০১২ সালে দেশিয় ও আধুনিক অস্ত্র নিয়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনটি।জানা যায়, একই বছরে এমএনডিপির প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন পালে ম্রো। তবে একই বছরের ৭ জুন সংগঠনটির নিয়ে পালে ম্রো প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন। পালে ম্রো আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন।ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টি (এমএনডিপি) নেতা মেনরুম ম্রো জানান, অস্ত্র ছেড়ে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। এখন আমরা সরকারের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা চাই।এছাড়াও সংগঠনটি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে তাদের দমনে যৌথবাহিনীর কয়েক দফা অভিযানে গ্রেফতার হয় সংগঠনটির শীর্ষ স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী। অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে সংগঠনটি। আর স্থবির হয়ে পড়ে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলে উদ্যোগ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা।এদিকে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মার্মা জানান, ম্রো আদিবাসী শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেয়ার চেষ্টা করা হবে।সৈকত দাশ/এআরএ/আরআইপি

Advertisement