ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ থেকে ২ কিলোমিটার সামনে গেলেই চায়না মোড়ে আরেকটি ব্রিজ। এটির নাম মটকিভাঙা ব্রিজ। একটি খালের ওপর তৈরি এ ব্রিজটি।
Advertisement
প্রায় ২ বছর আগে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থাতেও ভারী ভারী যানবাহন চলাচল করছে নিয়মিত। এতে করে যেকোনো সময় ব্রিজ ভেঙে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এ ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ভৈরবের প্রায় ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে বালু বোঝাই আনুমানিক ৩ হাজার ট্রাকও চলাচল করে। সবগুলোই অভারলোডেড। অতিমাত্রায় ভারী পণ্য ব্যবহারের ফলে ব্রিজটি দিন দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।
১৯৬০ সালে মটকিভাঙা এ ব্রিজটি তৈরি করা হয়। এরপর থেকে সংস্কারমূলক আর কোনো কাজ করা হয়নি। প্রায় দুই বছর আগে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড দেয়া হলেও বারবার সেগুলো চুরি হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ এসব সেতুর বিভিন্নস্থানে তিনবার ফেটে যায়। ফেটে যাওয়া তিনটি স্থানে ইস্পাতের শিট ও ইট দিয়ে দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। তবুও কেউ ঝুঁকির পরোয়া করছে না।
Advertisement
রফিক নামে এক বাসযাত্রী বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন যাবৎ জোড়াতালি দিয়ে চলছে। আমরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছি। আমরা চাই সেতুটি যেন খুব দ্রুত নির্মাণ করা হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় মোবারক হোসেন বলেন, এ সেতু দিয়ে হেঁটে গেলেও ভয় লাগে, কখন যেন ভেঙে পড়ে। সব সময় ব্রিজ ভাঙার ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়।
ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরের নিয়মিত বাসচালক কামাল মিয়া বলেন, খু্ব ঝুঁকি নিয়ে আমরা এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করি। ব্রিজটি পার হওয়ার সময় খু্ব ধীরে ধীরে গাড়ি পার করি। আমরা এমনভাবে সিটে বসি যেন ব্রিজ ভেঙে পড়ার সময় যেন লাফ নিজের জীবন বাঁচাতে পারি। সরকারের কাছে আকুল আবেদন ব্রিজটি তৈরি করে আমাদের বাঁচান, সাধারণ মানুষকে বাঁচান।
মটকিভাঙা ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা ট্রাকচালক ওয়াজেদুল বলেন, ব্রিজটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি আছে জেনেও আমরা চলাচল করি। কারণ, এ ব্রিজ ছাড়া চলাচলের বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।
Advertisement
ট্রাকচালক আবুল কালাম বলেন, সংসার ও পেটের দায়ে আমরা এ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য। তবে, আমাদের দাবি অতি তাড়াতাড়ি যেন নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় আবু সায়িদ সরকার বলেন, এ ব্রিজ অনেকদিন আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্রিজ দিয়ে দৈনিক কম করে হলেও ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে কাজ শুরু হচ্ছে না। তবে, যতদিন পর্যন্ত কোনো গাড়ি ব্রিজ ভেঙে পড়ে ১০/১২ জন মানুষ না মরবে, ততদিন সরকারের এ ব্রিজের প্রতি নজর পড়বে না
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগ এর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা সবাই সচেতন হই। বিভিন্নভাবে নিজদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে আমাদের হুঁশ থাকে না। এ ব্রিজটি দীর্ঘদিন আগে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে মানুষজন এটি ব্যবহার করছে। আমরা চাই কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই যেন ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করা হয়।
ময়মনসিংহ মটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন চানু বলেন, ব্রিজটি বহুদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও কাজ শুরু হচ্ছে না। এতে করে আমাদের পরিবহন শ্রমিক ও চালকরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এ ব্রিজ দিয়ে দৈনিক প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। দ্রুত যেন ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ঝুঁকিপুর্ণ ঘোষণা করার পরেও বিভিন্ন ট্রাক ৪০ টনের বেশি বালু বা মালামাল নিয়ে চলাচল করে। এতে ব্রিজটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত লোডের কোন গাড়ি যেন চলাচল না করে এজন্য তিনি স্থানীয় পুলিশ প্রশানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ব্রিজের কাজ কবে শুরু হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই মটকিভাঙা ব্রিজটি প্রায় ১৮ কোটি ব্যয়ে নির্মাণের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে। ব্রিজটি প্রায় ৭৬ মিটার লম্বা হবে। কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এছাড়াও চায়না মোড় থেকে শম্ভভুগঞ্জ বাজার পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে।
এমএএম/পিআর