সৌভাগ্যবান ওইসব ব্যক্তি, মৃত্যুর পরও যাদের আমলনামায় সাওয়াব যোগ হতে থাকে। সৌভাগ্যের অধিকারী এসব ব্যক্তি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের ওপরই আমল করে গেছেন। নিজ নিজ সন্তানদেরও ওই হাদিসের আলকারী হিসেবে তৈরি করে গেছেন।
Advertisement
দুনিয়ার জীবনে তারা যেমন দান-সাদকা ও উপকারী জ্ঞান বিতরণ করেছেন ঠিক তেমনি নিজ পরিবারে রেখে গেছেন নেক সন্তান ও উত্তরাধিকার। যারা নিয়মিত সুন্নাতের ওপর আমল করে চলছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সব আমল (সাওয়াব লাভের পথ) বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল ব্যতিত। তা হলো-- صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ বা চলমান দান;- عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ ইলমিন ইয়ানতাফাউ বিহি বা এমন ইলম (জ্ঞান) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।- وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ আর এমন নেক সন্তান (রেখে যাওয়া), যে (মৃত্যুর পর) তার জন্য দোয়া করবে।’ (মুসলিম, তিরমিজি, মিশকাত)
- যে দান দীর্ঘদিন মানুষের কল্যাণে আসেএমন দান-অনুদান করা। যত দিন এর অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন তার বিনিময়ে দানকারীর আমলনামায় সাওয়াব পৌঁছতে থাকবে। হাদিসে পাকে এর একটি উদাহরণ এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলিম অপর মুসলিমকে একটি কাপড় পরাবে, যতক্ষণ ওই ব্যক্তি কাপড়ের একটি টুকরোও তার গায়ে ব্যবহার করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকবে।’ (মিশকাত)
Advertisement
এভাবে যেসব দান-সহযোগিতায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজের উপকার হয়; তথা মাদরাসা, মসজিদ, পাঠাগার, হাসপাতাল, ইয়াতিমখানা, রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রিজ, গরিব-অসহায় মানুষের জন্য কল্যাণ ফান্ড, পাবলিক টয়লেট, রাস্তার পাশে ছায়া ও ফল দেয়া গাছ-গাছালি, সুন্দর পরিবেশসহ জনকল্যাণমূলক যে কোনো কাজে সাওয়াবের নিয়তে দান সহযোগিতা করা। এসব কাজের সাওয়াব মানুষের মৃত্যুর পর আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।
- যে ইলম মানুষের জন্য উপকারিযে শিক্ষায় মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে এমন যে কোনো জ্ঞানদান বা শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের সাওয়াবও মানুষের আমল নামায় যোগ হতে থাকবে। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ হাদিসে অন্যকে শেখানোর দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি সাওয়াব পাবে। এভাবে যত মানুষকে কুরআন-হাদিস, ইসলামি জ্ঞানসহ দুনিয়া ও পরকালে কল্যাণে যেসব জ্ঞান শেখাবে, এর যথাযথ কল্যাণমূলক বাস্তবায়নে মৃত্যুর পরও আমলনামায় পৌঁছতে থাকবে সাওয়াব আর সাওয়াব।
- রেখে যাওয়া নেক সন্তানদান-সহযোগিতার মধ্যে সেই খরচ বা দানই উত্তম, যা নিজ পরিবারের জন্য করা হয়। নিজের সন্তান-সন্তুতিকে যদি দানের প্রতি উৎসাহিত করা যায়, জ্ঞানার্জনের পর জনসেবায় জ্ঞানের বিতরণকারী বানানো যায় এবং বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনকে ভালোবাসার অনুভূতি ও উপলব্ধির দিকে ধাবিত করা যায়। এসব সন্তানই মৃত্যুর পর বাবা-মা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য দুই হাত তুলে দোয়া করবে। এ দোয়া মানুষের কাজে আসবে।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবে চলতে থাকলে নেক সন্তানের দোয়া থেকে বঞ্চিত হবে না কোনো নেককার মানুষ। এ কারণেই বাবা-মা ও নিকটাত্মীয়রা সচেতন হলে সন্তান-সন্তুতিও হয়ে ওঠে নেককার এবং সচেতন। হাদিসে পাকে এ নেক সন্তানের কথাই বলা হয়েছে। যারা আল্লাহর কাছে এভাবে প্রার্থনা করবে-- رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُউচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়ালেওয়ালেদাইয়্যা ওয়া লিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়া কুমুল হিসাব।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার বাবা-মাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।’
Advertisement
- رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًاউচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসের এ শিক্ষা ও নসিহত অনুযায়ী জীবন গঠন করা। মৃত্যুর পরও আমলনামায় সাওয়াব যোগ হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে দুনিয়াতেই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আর তাতে মিলবে দুনিয়া ও পরকালের প্রকৃত সফলতা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের কল্যাণে সাওয়াব লাভের এ নসিহত ও শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। নিজ নিজ সন্তানদের এ শিক্ষার আলোকে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস