বিশেষ প্রতিবেদন

স্বাস্থ্যসেবা দিতে ব্যর্থ গোপালগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো

গোপালগঞ্জের বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক সাধারণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। নানা অনিয়মের মধ্যে চলছে ক্লিনিকের কার্যক্রম। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাধারণ রোগ, শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য, সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ, পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত সেবা দেয়ার কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অনুমানের ভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে মানুষের জীবন।জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও প্রসূতি মায়েদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ক্লিনিকে গোপনীয়তা রক্ষার পরিবেশ না থাকায় প্রসূতি মায়েরা ক্লিনিকে রুটিং চেকআপ করতে আসতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। এছাড়া  কিছু কিছু ক্লিনিকে পুরুষ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) কাছ থেকে গর্ভকালীন সেবা নিতে তাদের আগ্রহ কম।ডায়রিয়া ও নিমোউনিয়া আক্রান্ত শিশুদের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া যে চিকৎসা দেয়া হয় তা অনেকটা অনুমানভিত্তিক। শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ নিয়ে সদর উপজেলার গোবরা কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা এক শিশুকে পর্যবেক্ষণ না করে ওষুধ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ক্লিনিকের সিএইচসিপি স্থাথেসথিকোপ দিয়ে শিশুকে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। অপরদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কিছু ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা-ঘাট নেই বলে জানা গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি অধিকাংশ ক্লিনিকে। সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের মনি চৌধুরী  জাগো নিউজকে বলেন, তার ৮ মাসের মেয়ে ফাহিমা ঠান্ডাজনিত কারণে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে ভুগছে। তিনি তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য গোবরা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। ক্লিনিকের আপা (সিএইচসিপি) কোনো পর্যবেক্ষণ না করেই ওষুধ দিয়ে দিয়েছেন। ওই ওষুধে আমার মেয়ে সুস্থ হবে কিনা জানি না।পোদ্দারের চর গ্রামের গৃহবধূ লিপি বেগম (৪০) জানান, ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি গ্রহণের সুযোগ আছে তা তিনি জানেন না। প্রথমবারের মতো তিনি জ্বরের চিকিৎসার জন্য এসেছেন। ডাক্তার আপা তাকে প্যারাসিটামল ও এমক্সিসিলিন ক্যাপসুল দিয়েছেন। সাংবাদিকদের  সঙ্গে কথা বলে তিনি পরিবার পরিকল্পনা সেবার বিষয়ে জেনেছেন।  কমিউনিটি  ক্লিনিকের কমিউনিটি কোর সার্ভিস প্রোভাইডার হ্যাপি খানম সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, ক্লিনিকের দায়িত্বে  থাকা  উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (সেকমো) আতিয়া আক্তার গত মাসে বদলি হয়ে গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিদর্শক ফিরোজা বেগম প্রেষণে ক্লিনিকে চাকরি করছেন। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের এফডব্লিউভি পদটি শূন্য। অপর সিএইচসিপি শেখ মাসুকা ইয়াসমিন ছুটিতে থাকায় তাকে একাই সামলাতে হচ্ছে সব কাজ। অপরদিকে চাকরির পর তাকে শুধু ৩ মাসের একটি মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সীমিত জ্ঞান দিয়ে মাতৃ ও শিশু সাস্থ্য সেবা দেয়া কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো জানান, ক্লিনিকে মাসে একবার ইপিআই ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের উপর স্যাটেলাইট ক্যাম্পিং করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে  ৩০ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। ক্লিনিকে ওষুধের সল্পতা নেই। ওষুধ ফুরিয়ে গেলে চাহিদাপত্র দিলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়। আগের থেকে ক্লিনিকে সেবা নিতে অনেক বেশি মানুষ আসছে বলেও তিনি জানান।গোপালগঞ্জ  স্বাস্থ্য বিভাগ  সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলায় ১’শ ১৮টি কমিউনিটি  ক্লিনিক চালু রয়েছে। প্রস্তাবিত ক্লিনিকের সংখ্যা ছিল  ২’শ ২৭টি।  চালু হতে বাকী আছে ৪৩টি ক্লিনিক। চালু  ক্লিনিকগুলোতে ১’শ ৮৪ জন সিএইচসিপি কাজ  করছেন। গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম জানান, সেবা প্রদানকারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্বসহ বিভিন্ন  বিষয়ে আরো প্রশিক্ষণের যৌক্তিকতা ও কিছু  কিছু অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন ক্লিনিকগুলোকে গণমুখী করতে সরকারের পলিসি লেবেলে  কাজ চলছে। গুণগত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। এসএস/পিআর

Advertisement