এ বছরের শুরুতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির ধাক্কায় অচল হয়ে পড়ে বিশ্ব বাণিজ্য। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় দেশের রফতানি আয়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে রফতানিখাত। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করছে রফতানি আয়।
Advertisement
২০২০-২১ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি বেড়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এসময় দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে রফতানি বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। এছাড়া প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে দেশে লকডাউন জারি হয়। এতে বছরের শুরুর দিকে পুরো বিশ্ব-অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ে। স্থবির হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে অর্থনীতি। সরাসরি বাণিজ্যিক আঘাত পড়ে দেশের রফতানিখাতেও। এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হতে শুরু করেছে। লকডাউন উঠে যাওয়ায় ফিরতে শুরু করেছে রফতানি আদেশ। এতে মহামারির প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন রফতানিকারকরা।
Advertisement
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম তিন মাসে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৬৬ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৯৮৯ কোটি ৬৮ লাখ বা (৯.৮৯ বিলিয়ন ডলার)। অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আগের বছর একই সময় রফতানি আয় হয়েছিল ৯৬৫ কোটি ডলার।
একক মাস হিসাবে সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে ৩০১ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। এ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। চলতি সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮৫ কোটি ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ২৯১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে এ খাতের রফতানি কমতে শুরু করে, এপ্রিলে পোশাক রফতানিতে নামে ভয়াবহ ধস। মে মাসেও তা অব্যাহত থাকে। জুন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পোশাকখাত। এর ধারাবাহিকতা জুলাই, আগস্টের মতো সেপ্টেম্বরেও দেখা যায়।
ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা (৮.১২ বিলিয়ন ডলার), যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতের আয়ের অঙ্ক ছিল ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
Advertisement
মহামারির মধ্যেও পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। এ শিল্পে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করে, যা ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কৃষিপণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি ২১ লাখ ডলার; এর বিপরীতে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে এ খাতে রফতানি আয় হয়েছিল ২৬ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ২২ কোটি ৫১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। অবশ্য এখাতে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় হয়েছিল ২৫ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্লাস্টিকজাত পণ্য রফতানি কমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্লাস্টিকজাত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই কোটি ৮৯ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে দুই কোটি ৬১ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এ খাতে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
এসআই/এইচএ/এমকেএইচ