দেশজুড়ে

রহস্যময় মড়কে বিবর্ণ উপকূলীয় বন

কক্সবাজার উপকূলের প্যারাবনে দেখা দিয়েছে রহস্যময় মড়ক। নাম না জানা এ পোকার আক্রমণে এখন বিলীন হওয়ার পথে উপকূলের বিস্তীর্ণ বনভূমি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া এ মড়কের রহস্য উদঘাটন করতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে নমুনা পাঠিয়েছে উপকূলীয় বন বিভাগ। পাশাপাশি কক্সবাজার শহর, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর মড়ক লাগা বন দেখতে এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ বিষয়টি মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছে। মহেশখালীর গোরকঘাটার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইকবাল বলেন, উপজেলার পাঁচটি বিটের প্রায় ১৭ হাজার একর প্যারাবনের বাইন গাছে ব্যাপকভাবে মড়ক লেগেছে। বিষয়টি উপকূলীয় বন বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।তিনি জানান, ১৯৮০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় প্যারাবন সৃজন করা হয়। এসব জায়গায় প্রায় ১৭ লাখ বাইন গাছ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগরের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া ও অজ্ঞাত পোকা আক্রমণ করায় হুমকির মুখে আছে প্যারাবন। বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজন জানান, উপকূলীয় এলাকার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার বিভিন্ন সময় এই প্যারাবন সৃজন করেছে। কিন্তু সৃজিত এ বনের বাইন গাছ থেকে সম্প্রতি এ মড়কের উৎপত্তি। কক্সবাজার উপকূলে থাকা ম্যানগ্রোভ বনের ৮০ শতাংশে আছে বাইন গাছ। তাই দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছে বন। এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা সবুজ রঙের এক ধরনের পোকার আক্রমণেই বাইন গাছ এভাবে ধূসর হয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক জিএম কবির বলেন, কিছুদিন আগে একটি-দুটি বাইন গাছে এমন মড়ক দেখা যায়। সম্প্রতি বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এটি। জরুরি পদক্ষেপ নিতে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে মড়কের রহস্য উদঘাটন করতে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে নমুনা তিনি বলেন, এ মড়ক বন্ধ করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মেডিসিন ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মড়কে মানবসৃষ্ট ষড়যন্ত্রের লক্ষণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লে­খ করেন তিনি। চট্টগ্রামের উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আরএসএম মুনিরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকার ম্যানগ্রোভ বনে এখন মড়ক দেখা দিয়েছে। এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা সবুজ একটি পোকার আক্রমণেই ধূসর হয়ে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ বন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এ মড়কের উৎপত্তি হচ্ছে বাইন গাছ থেকে। কক্সবাজার উপকূলে থাকা ম্যানগ্রোভ বনের ৮০ শতাংশে এই বাইন গাছ থাকায় পুরো বনই এখন ধূসর দেখাচ্ছে।সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট, নুনিয়ারছড়া, মহেশখালীর গোরকঘাটা, চরপাড়া, মহেশখালী জেটি সংলগ্ন এলাকা, সোনাদিয়া, বড়দিয়া, পোকখালী, ঘটিভাঙা, কালারমারছড়ার পশ্চিমে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এ মড়ক। কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় থাকা প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমির ৮০ শতাংশে আছে বাইন ও কেওড়া গাছ। এ গাছে সংক্রমণ বেশি হওয়ায় পুরো ম্যানগ্রোভ বনই ধূসর দেখাচ্ছে এখন। অভিন্ন চিত্র কুতুবদিয়াতেও। উপকূলীয় পোকখালীর বাসিন্দা ইয়াছিন উল্লাহ জানান, কয়েক দিন ধরে বাইন গাছগুলোর পাতা হঠাৎ করে ধূসর হয়ে ঝরে পড়ছে। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় পুরো গাছ। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় ও জলেচ্ছ্বাসের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময় এই প্যারাবন সৃজন করলেও এখন সেটি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশও হুমকির মুখে আছে। তিনি আরো বলেন, অক্টোবর মাসের শেষ দিকে এ মড়কের উৎপত্তি হয়। নভেম্বর শেষ না হতে ধূসর হয়ে গেছে ম্যানগ্রোভ বনের বিস্তীর্ণ এলাকা। সায়ীদ আলমগীর/এসএস/পিআর

Advertisement