চিনি আমাদের শরীরের নানা সমস্যা সৃষ্টির পেছনে দায়ী। ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এটি বড় কারণ। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন তাদেরকে প্রথমেই চিনি বাদ দিতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। এর বদলে প্রাকৃতিক চিনি, গুড় কিংবা মধু খেতে বলা হয়।
Advertisement
মিষ্টি না খেয়ে কি থাকা যায়! তাই তো প্রতিদিনের চায়ের কাপে মধু বা গুড় মিশিয়ে খাচ্ছেন। মিষ্টি খাবার তৈরিতে ব্যবহার করছেন গুড়। কিন্তু এই দুই স্বাস্থ্যকর উপাদান অনিয়মিত গ্রহণ করে লাভ নেই, বরং তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই কোনটা বেশি উপকারী এবং প্রতিদিন কতটুকু গ্রহণ করা যাবে তা জেনে রাখাও জরুরি। বিস্তারিত প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মধু এবং গুড় চিনির বদলে ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগক্ষেত্রেই আমরা এতে কতটা ক্যালোরি আছে তা খেয়াল করতে ভুলে যাই। আপনি যদি ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তবে ক্যালোরি গণনা করা এবং ঝরানো দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
গুড় কীভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে?গুড় আমাদের দেশীয় মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা সাদা চিনির পরিবর্তে গুড় বেছে নেন। গুড় পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ১, বি ৬ এবং সি প্লাসের সমৃদ্ধ উৎস, এতে ভালো পরিমাণ ফাইবার থাকে যা টক্সিন অপসারণ করে এবং পাচনতন্ত্রকে সহজে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। দিনের শুরুতে এককাপ গরম পানি এবং গুড় দিয়ে শুরু করতে পারেন। এটি হজমশক্তি ভালো করে। গুড়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি ফেনলিক যৌগও রয়েছে যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
Advertisement
চিনির তুলনায় গুড় কতটা স্বাস্থ্যকর?যেহেতু স্বাদ চিনির তুলনায় কিছুটা কম, তাই বেশিরভাগ লোক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে গুড় খেয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তি সাধারণত এককাপ চা বা কফিতে এক চামচ চিনি খেয়ে থাকেন তবে গুড়ের স্বাদে অভ্যস্ত না হলে প্রয়োজনের তুলনায় আরও কিছু যোগ করতে হবে।
গুড়ের মধ্যে চিনির মতো ক্যালোরি থাকে। তাই গুড় বাড়িয়ে খেলে আপনি ক্যালোরি গ্রহণও বাড়িয়ে তুলছেন। গুড়ে সুক্রোজ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। হতে পারে পুরোনো গুড়ে প্রিজারভেটিভ মেশানো। যা আবার আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে সহায়ক নয়।
ওজন কমানোর জন্য মধু ব্যবহারচিনি এবং মধু উভয় মিষ্টি - প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া বলে মধুকে একটু বেশিই উপকারী মনে করা হয়। চিনিতে গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোজের অনুপাত হলো ৫০-৫০, যেখানে মধুতে কেবল ৩০% গ্লুকোজ এবং ৪০% এর চেয়ে কম ফ্রুক্টোজ থাকে। এতে আরও বেশ কয়েকটি অন্যান্য চিনির অণু রয়েছে যা শরীর দ্বারা হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং সবসময় ফ্যাট হিসাবে সঞ্চিত হয় না। এর অর্থ এটি তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর। মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অসুস্থতা রোধকারী হিসাবে পরিচিত। এটি আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেস খনিজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করতেও কাজ করে। হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে তার শরীরকে ডিটক্সাইফাই করে এবং বিপাকক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে।
খরচ কমাতেআপনি যদি সংযমের নিয়মটি না মেনে চলেন তবে বড় ক্ষতি করছেন। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এক টেবিল চামচ মধুতে ৬০-৬৪ ক্যালোরি রয়েছে যা চিনির মতোই। চিনি বা গুড়ের চেয়ে একমাত্র মধু খেলে মিলবে বেশি উপকার কারণ এটি অন্যান্য সুবিধাযুক্ত।
Advertisement
উপসংহারচিনির বদলে গুড় বা মধু খাওয়া একটি ভাল অভ্যাস-যতক্ষণ না আপনি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ না করেন। চিনি থেকে দূরে থাকার অভ্যাস আপনাকেই গড়ে তুলতে হবে। প্রাকৃতিক শর্করা বেছে নিতে পারেন। মিষ্টি ফলগুলো খেতে পারেন। স্টিভিয়া, দারুচিনি, খেজুর বা পাম চিনির মতো মশলাও চিনির বদলে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এইচএন/এএ/এমকেএইচ