আন্তর্জাতিক

করোনা আক্রান্ত ট্রাম্পের ঝটিকা সফর নিয়ে তীব্র সমালোচনা

করোনা আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গাড়িবহর নিয়ে ঝটিকা মোটর শোভাযাত্রা করেছেন। সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাতে হাসপাতাল থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

মাস্ক পরে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট কালো রঙের এসইউভি গাড়িতে চেপে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। একই গাড়িতে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরাও ছিলেন; এখন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এই কর্মকর্তারা করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়লেন কিনা সেটি নিয়ে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জুড দীরি বলেন, মেডিকেল টিমের সদস্যরাই নিরাপদ বলে মোটর শোভাযাত্রায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই ট্রাম্পের করোনা আক্রান্ত ও অসুস্থতার তীব্রতা নিয়ে নানা ধরনের সাংঘর্ষিক তথ্য আসছে। বিভিন্ন সময়ে হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্পের চিকিৎসকদের বিপরীতমুখী তথ্যের কারণে প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের পাশাপাশি ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পসহ প্রেসিডেন্টের আশপাশের জ্যেষ্ঠ অনেক সহযোগী এবং রিপাবলিকানদলীয় সিনেটরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

Advertisement

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৭৪ হাজার এবং মারা গেছেন ২ লাখ ১০ হাজার।

কী করলেন ট্রাম্প?

ওয়াশিংটনের ওয়াল্টার রিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইট বার্তায় এ হাসপাতালের বাইরে অবস্থানরত দেশপ্রেমীদের শুভেচ্ছা জানাতে আকস্মিক সফর করবেন বলে জানান তিনি। পরে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে কালো এসইউভি গাড়িতে বসে হাসপাতালের বাইরে ভক্তদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান ট্রাম্প। এ সময় গাড়ির সামনের আসনে অন্তত দুজনকে দেখা যায়, পেছনের আসনে ছিলেন প্রেসিডেন্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকার সরকারি যে স্বাস্থ্য পরামর্শ রয়েছে ঝটিকা সফরের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা লঙ্ঘন করেছেন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে তিনি সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদেরও সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছেন।

ওয়াল্টার রিড হাসপাতালের চিকিৎসক জেমস ফিলিপস এক টুইটে বলেন, প্রেসিডেন্টের এসইউভিটি শুধু বুলেটপ্রুফই নয়, বরং রাসায়নিক হামলায়ও অভেদ্য। গাড়ির ভেতরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

Advertisement

তিনি বলেন, গাড়ির ভেতরে যারা ছিলেন বর্তমানে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো দরকার। ডেমোক্র্যাটরাও ট্রাম্পের এই ঝটিকা সফরের সমালোচনা করেছেন। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হাকিম জেফরিস এক টুইট বার্তায় বলেছেন, আমাদের নেতৃত্ব দরকার, ছবি নয়।

এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বিবেচনায় স্বামী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাসপাতালের বাইরের ঝটিকা সফরে যেতে রাজি হননি ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মৃদু সংক্রমণ নিয়ে হোয়াইট হাউসেই রয়েছেন তিনি।

ভিন্ন ভিন্ন বার্তায় অস্বস্তি

শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া হয়েছিল; তা আরও বেশি গুরুতর ছিল বলে স্বীকার করে হোয়াইট হাউস। ওইদিন জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোভিড-১৯ মৃদু সংক্রমণ রয়েছে। কিন্তু পরে তাকে অতিরিক্ত অক্সিজেন দেয়া হয়েছিল বলে জানান প্রেসিডেন্টের চিকিৎসক সিন কনলি।

বর্তমানে তাকে করোনায় আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসন দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কনলি।

বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪ শতাংশের নিচে এবং পরদিন ৯৩ শতাংশের নিচে নামে। পরে প্রেসিডেন্টকে অক্সিজেন সাপ্লিমেন্ট দেয়ার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তিনি প্রথমে রাজি না হলেও পরে অক্সিজেন দেয়া হয় বলে জানান কনলি। কেন অক্সিজেন দেয়ার তথ্য গোপন রাখা হয়েছিল; এমন প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক কনলি বলেন, আমি পুরো দলের উৎসাহী মনোভাবের প্রতিফলন প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিলাম। মূল বিষয় হলো- আসলেই তিনি (প্রেসিডেন্ট) ভালো করছেন। কিন্তু এর আগে মার্কিন চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের আগের ২৪ ঘণ্টা ছিল খুবই উদ্বেগজনক।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মেলানিয়া ট্রাম্পের করোভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তিনদিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও বেশকিছু প্রশ্নের জবাব মিলছে না।

পরীক্ষায় ট্রাম্পের শেষ কবে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছিল? তার স্বাস্থ্যের সব সমস্যা সম্পর্কে কি জানা যাচ্ছে? ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে কি আইসোলেশনে থাকা উচিত? হোয়াইট হাউস কেন ধীরগতিতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর মিললেই বোঝা যাবে ভাইরাসটি প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্যের, খ্যাতির এবং রাজনৈতিক অবস্থানের কতটা ক্ষতি করবে। ৭৪ বছর বয়সী মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট করোনা সংক্রমিতদের ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। অতিরিক্ত ওজন ও বয়সের বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ট্রাম্পকে শুক্রবার বেশ কয়েকটি ওষুধের একটি ককটেল প্রয়োগ করা হয়। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভিরসহ পাঁচদিনের ওষুধের একটি কোর্স শুরু হয়েছে তার।

হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পালনের ছবি এবং ভিডিও টুইট করে ভাবমূর্তি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তিনি।

ট্রাম্পের আশপাশের আর কারা করোনায় আক্রান্ত?

গত ২৬ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকের অনেকেই বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ বৈঠককে সুপার স্প্রেডার হিসেবে বিবেচনা করে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং চলছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়াও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া, প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হোপ হিকস, নির্বাচনী প্রচার দলের ম্যানেজার বিল স্টিপাইন ও হোয়াইট হাউসের সাবেক পরামর্শক কেলিয়ান্নে কনওয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সহকারী যাকে ‘বডি ম্যান' হিসেবে মনে করা হয়; সেই নিকোলাস লুনাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

রাজনৈতিক হালচাল

শনিবার ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার দল বলেছে, নির্বাচনী প্রচারে প্রেসিডেন্ট না ফেরা পর্যন্ত তারা পুরোদমে কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র ও এরিক এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ দলের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন।

সোমবার পর্যন্ত হোয়াইট হাউস কোনও কর্মসূচি নির্ধারণ করেনি। এদিকে আগামী বুধবার ডেমোক্র্যাট মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বুধবার নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেবেন মাইক পেন্স।

গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিতর্কে অংশ নিলেও সোমবার ফ্লোরিডার মিয়ামিতে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে জো বাইডেনের। ওই বিতর্কের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট করোনায় আক্রান্ত হন। পরে রোববার সন্ধ্যায় বাইডেনের করোনা পরীক্ষা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

এসআইএস/পিআর