রোহিত শ্রীবাস্তব। লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন কর্মকর্তা। ভারতের অযোধ্যায় বিকল্প বাবরি মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে প্রথম আর্থিক অনুদান দিয়েছেন তিনি। ভারতের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসসহ অনেকেই এ খবর প্রকাশ করেছে।
Advertisement
বিকল্প বাবরি মসজিদ নির্মাণে রোহিত শ্রীবাস্তব নিজ বেতনের ২১ হাজার রুপি অনুদান দিয়েছেন। অনুদান দেয়ার খবরে ভারতজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। আইন বিভাগের কর্মকর্তা রোহিত শ্রীবাস্তবের অনুদানের চেক গ্রহণ করেন সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের আওতাধীন ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আতহার হুসাইন।
তিনি জানান, বিকল্প বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইয়ের কাছ থেকে প্রথম আর্থিক অনুদান এসেছে। এটিকে তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন।
অনুদান দেয়া কর্মকর্তা রোহিত শ্রীবাস্তব বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা দিতেই তিনি এ অনুদান দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও অসহিষ্ণুতার এ সময়ে একতাবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিতে চাই সবাইকে। তারই অংশ হিসেবে আমার বেতন থেকে ২১ হাজার রুপি অনুদান দিয়েছি।
Advertisement
রোহিত শ্রীবাস্তব আরও জানান, ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য আমি যেমন আমার মুসলিম বন্ধুদের ছাড়া হলি বা দীপাবলি অনুষ্ঠান উদযাপন করি না। তেমনি আমার মুসলিম বন্ধুরাও আমাকে ছাড়া তাদের ঈদ অনুষ্ঠান উদযাপন করে না। এটি শুধু আমাদের ব্যাপারে নয়, এটি মূলত ভারতের কোটি কোটি হিন্দু ও মুসলিমের গল্প।
যদিও ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর একদল উগ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। তাতে ভারতজুড়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যায়। দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান দেয় আদালত। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুর গ্রামে বিকল্প বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য ৫ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে দেশটির সরকার। ইতিমধ্যে সে স্থানে মসজিদ নির্মাণের কাজও কিছুটা এগিয়েছে। তাতে প্রথম অনুদান দেয় হিন্দু কর্মকর্তা রোহিত শ্রীবাস্তব।
উল্লেখ্য, ২০ আগস্ট (রোববার) ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আতহার হুসেইন জানান, নতুন মসজিদটি কোনও সম্রাট বা বাদশাহর নাম নামকরণে করা হবে না। ভিন্ন নামে নির্মিত হবে এ মসজিদ। মসজিদে অবকাঠামোতেও আসবে পরিবর্তন।
ইতিমধ্যে মসজিদটির লোগো প্রকাশ করা হয়েছে। অবকাঠামোতেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এটির নকশা তৈরিতে স্থপতিদের দেয়া হয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। অবকাঠামো পরিবর্তন হলে মসজিদটি দেখতে কেমন হবে?
Advertisement
এমন এক প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ থেকে ভিন্ন। মিনার ও গম্বুজবিহীন চতুর্ভুজ আকৃতিতে তৈরি হবে এর অবকাঠামো। অনেকটা কাবা শরিফের আদলে তৈরি হতে পারে।
ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আতাহার হুসেইন আরও জানিয়েছেন, ধন্নিপুরে নির্ধারিত ৫ একর জায়গায় নির্মিত হবে ১৫ হাজার বর্গমিটারের এ মসজিদ। এ মসজিদে থাকবে জাদুঘর, হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র। থাকবে নিজস্ব ওয়েবসাইট।
বিকল্প বাবরি মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে অনুদান সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে এ ওয়েবসাইট নির্মাণের কাজ চলছে। এ ওয়েবসাইটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের লেখাও প্রকাশ করা হবে বলে জানান আতহার হুসেইন। ওয়েবসাইটটি নির্মাণাধীন। পোর্টাল তৈরি হলে মসজিদ নির্মাণে অনুদান সংগ্রহ শুরু হবে।
এমএমএস/এমএস