ফিচার

যুক্তরাষ্ট্রে সফল বাংলাদেশি রুদমীলা নওশীন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো তাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। তাদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একজন দেশকে তুলে ধরেছেন বিশ্বের প্রতাপশালী কোম্পানিগুলোর সামনে। তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা রুদমীলা নওশীন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন বেনজির আবরার-

Advertisement

বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্কলাসটিকা থেকে এ লেভেল শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যান আন্ডারগ্র্যাডের জন্য। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান জোস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করেন। পরবর্তীতে মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন ডিজিটাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পেয়েছেন ‘স্যুমা কাম লড’র মতো বিশেষ সাফল্য। সম্প্রতি তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক মিডিয়া কোম্পানির ‘হেড অব প্রডাকশন’। তার কোম্পানি সিলিকন ভ্যালি ট্যালি- পোডকাস্ট শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জোড়া প্রতিষ্ঠান কনফিগ ভিআর ও কনফিগ রোবটের ফাউন্ডার ও সিইও। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মিক্সড রিয়েলিটি, থ্রিডি মডেলিং, অ্যানিমেশন ও কন্টেন্ট নিয়ে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ভার্চুয়ালাইজ ইওর ভিশন’। যার লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের বিভিন্ন ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দেওয়া। কনফিগ ভিআর মূলত এআর (অগমেন্টেড রিয়েলিটি), ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) এবং মিক্সড রিয়েলিটির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এ সম্পর্কে রুদমীলা নওশীন বলেন, ‘আমাদের মূলত রিয়েল স্পেসের ওপর কাজ। এটি কম্পিউটার জেনারেটেড স্টিমুলেশন, যা ক্যামেরার ডেপথ সেন্স ব্যবহার করে এবং যেকোনো অবজেক্ট রিয়েল স্পেসে প্রজেক্ট করতে সহায়তা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রজেক্টগুলো নিকট ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করে মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে ফোবিয়া বা ভয়-ভীতি দূর করতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে কনফিগ রোবট অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চ্যাটবট, সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে থাকে। আমেরিকা, ইউরোপ ও বাংলাদেশে টিমে আছে।’ এ ছাড়া তারা বিভিন্ন উদ্যোক্তা ক্লাবের সাথে যুক্ত আছেন এবং বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করছেন। তিনি ইউএস-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরালো করতে চান।

Advertisement

ছোটবেলা থেকে বাবা-মা দু’জনকেই দেখে এসেছেন সফল প্রযুক্তিগত উদ্যোক্তা হিসেবে। তার বাবা ফজলে সেলিম বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। আর মা রুকসানা সেলিমের অবদান তার জীবনে অনেক। তার বড় চাচা ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ফজলে রাব্বী। দেশপ্রেম তাই তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শৈশব থেকেই বাবার অফিসে সিলিকন ভ্যালির নামকরা সব কোম্পানির ম্যাপ দেখতেন। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, একদিন তার গড়ে তোলা কোনো প্রতিষ্ঠানও সেখানে জায়গা করে নেবে।

ছোটবেলার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া রুদমীলা জানান, বিদেশের মাটিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা তার জন্য সব সময়ই গর্বের। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে আসার শুরুটা পরিবারের ইচ্ছাতে হলেও এখন তিনি সেই সিদ্ধান্তকে নিজের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন।

বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘এখানকার রিটেইল, উৎপাদন, শিক্ষা, সরকারি কর্মক্ষেত্র ও মিলিটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে এআর, ভিআর ও মিক্সড রিয়েলিটির ব্যবহার দেশকে কয়েকগুণ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অ্যানিমেশন, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, ডকুমেন্টেশনকে নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনে প্রচার করতে চান। এর জন্য তিনি তার প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। অবসরে কী করা হয় জানতে চাইলে জানান, তিনি একজন ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্সার। হাইকিং ছাড়া হারমোনিয়াম ও তানপুরায় রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। পেইন্ট আর ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ তিনি। স্বভাবতই সৃজনশীল কাজের প্রতি ঝোক রয়েছে তার।

Advertisement

ছাত্রাবস্থায় শিক্ষার্থী হিসেবে অধ্যয়নরত ছিলেন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু দমে যাননি। তার দৃঢ় ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অবস্থানের কারণেই আজকের এ সফলতা। তার ইচ্ছা, কয়েক বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশে রোবট তৈরির কোম্পানি খুলবেন। অথবা তার কিছু যন্ত্রপাতির উৎপাদন স্থল বানাবেন। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে কনফিগ রোবটের প্রতিষ্ঠা পরবর্তী কাজ শুরু হয়ে গেছে। এতে দেশীয় শিল্পে যেমন বিপ্লব ঘটবে, তেমন প্রযুক্তিতে আগ্রহীদের কর্মস্থলও সম্প্রসারিত হবে।

তিনি আশা করেন, ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে ধীরে ধীরে নারীরা আরও এগিয়ে আসবে। সর্বোপরি দেশের সব তরুণ প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে দেশকে বিশ্বের দরবারে সমাদৃত করবে। ১২ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর দেশে অপার সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশি এ প্রযুক্তিকন্যা। তিনি বিশ্বাস করেন, তার রোবট মানুষের চাকরি নেবে না বরং জীবন-মান করবে সহজ।

এসইউ/এএ/পিআর