‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আজ অনন্য উচ্চতায়। এই ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বন্ধু ও স্বজন, সৎ, পরিশ্রমী ও দক্ষ হিসেবে বাংলাদেশিদের সুনাম রয়েছে মালয়েশিয়ায়’।
Advertisement
শুক্রবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার নেতারা হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বলেন।
সিনিয়র কূটনীতিক রাষ্ট্রদূত মহ. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্নরকম সেবা দ্রুত ও সহজে প্রদান করার জন্য দূতাবাস আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে’।
বাংলাদেশিদের মালয়েশিয়ার আইন-কানুন মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে উন্নয়ন করছে তার স্বীকৃতি আমরা পাচ্ছি বিভিন্ন বিদেশিদের কথায় ও আচরণে। আমাদের সবার দায়িত্ব এ উন্নয়নের চাকাকে আরও গতিশীল করা। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। তাদের সেবা প্রদানের সুযোগ পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
Advertisement
করোনা মহামারির মধ্যেও প্রবাসীদের সহায়তা দেওয়া, কোম্পানি পরিবর্তন করার সুযোগ পাওয়া এবং চাকরিহীন হয়ে কাউকে দেশে ফিরে যেতে হয়নি। ছুটিতে দেশে থাকা কর্মীরা মালয়েশিয়া ফিরে আসা, বৈধ কর্মীদের বীমার আওতায় নিয়ে আসা এবং অবৈধদের বৈধতা প্রদানের জন্য প্রচেষ্টা দূতাবাস অব্যাহত রেখেছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, তার কর্মকালে বাংলাদেশ লেবার সোর্স কান্ট্রির স্বীকৃতি পেয়েছে, রি-হিয়ারিং হয়েছে, সকল সেক্টরে লোক নিয়োগ এবং ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির সুফল বাংলাদেশ পেয়েছে।
তিনি বিশ্বের মধ্যে প্রথম মালয়েশিয়াতে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করেন। কর্মীদের দ্রুত পাসপোর্ট সেবাদানের জন্য আলাদা ভবন নেওয়াও এই প্রথম, বর্তমানে অনলাইন ব্যবস্থা করার ফলে পাসপোর্ট সুবিধা পাওয়ার সুযোগ বেড়েছে।
হাই কমিশনারের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, প্রবাসীদের একটি সুরক্ষা নেটের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যেটি বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিটা কর্মী দ্রুত যে কোনো অবস্থানে থেকে দূতাবাসের সেবা পাবেন সরাসরি।
Advertisement
উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান ক্রমশঃ কমে এসেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২০ সালে এসে ২৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ক্রমাগত মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে শোকেস বাংলাদেশ, রোড শো করা এবং ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং হাউজিং ক্ষেত্রেও মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন বাংলাদেশের অন্যতম বিনিয়োগ অংশীদার হয়েছে মালয়েশিয়া।
তিনি আরও বলেন, ট্যারিফ সংক্রান্ত বিষয়ে দুই দেশের চলমান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আরও বাণিজ্যিক সুফল পাবে। বিগত বছরগুলোতে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট গমন বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রতি মালয়েশিয়া নাগরিকদের আগ্রহ ও আন্তরিকতার প্রকাশ করে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে হাইকমিশন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করেছে এবং রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া কক্সবাজারে ফিল্ড হাসপাতাল পরিচালনা করছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে।
করোনাকালে প্রবাসীদের পাশে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির আন্তরিক সহানুভূতিশীল অবস্থানকে মালয়েশিয়া সরকার দারুনভাবে প্রশংসা করেছে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় শুধু কর্মী নয় এখানে ছাত্র-শিক্ষক, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বুদ্ধিদীপ্ত ও দক্ষ ব্যক্তিদের পদচারণা রয়েছে। বন্ধু ও স্বজন, সৎ, পরিশ্রমী ও দক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকদের সুনাম রয়েছে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু নানা ধরনের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের কারণে এ কষ্টার্জিত সুনামকে দারুনভাবে ক্ষুণ্ন করে।
হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনের সকল সফলতার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিটির অবদান। পাশাপাশি সাংবাদিকদের অবদানও ছিল সবসময়। তাই বাংলাদেশ হাইকমিশন আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আগামীতেও দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করে এমন তথ্য দেশবাসী ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরবেন বলে আমার বিশ্বাস।
প্রবাসের সংবাদ প্রকাশনার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের উভয় দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভুল বার্তা দেয় বা ভীতির সঞ্চার করে এমন বার্তা গেলে দেশে অবস্থিত প্রত্যেকটা পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়ে।
বন্ধুরাষ্ট্র মালয়েশিয়া সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে মহ. শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে সকলে একসঙ্গে ইতিবাচক ভঙ্গিতে কাজ করে যেতে হবে। দেশের বদনাম হয় এমন কিছু করা বা লেখা ঠিক হবে না। তবেই দেশের একজন প্রকৃত দূতের মতো ভূমিকা পালন করা হবে।
আলোচনা শেষে হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম ও ডেপুটি হাইকমিশনার ওয়াহিদা আহমেদকে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বিদায়ী সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এ সময় হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কমডোর মোস্তাক আহমেদ, শ্রম কাউন্সিলর মো. জহিরুল ইসলাম, কাউন্সিলর (শ্রম ২য়) মো. হেদায়েতুল ইসলাম, প্রথম সচিব মো. মাসুদ আহমেদ, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব মালয়েশিয়া সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমেদুল কবির, সাধারণ সম্পাদক বশীর আহমেদ আহমেদ ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম হিরণ, শাহাদাত হোসেন, কাজী আশরাফুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আবির উদ্দিন ও মহিলা সম্পাদিকা ফারজানা সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমআরএম/পিআর