পিরোজপুরে কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে ক্লিনিকগুলোর বেহালদশা। এতে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি)। ওই সব ক্লিনিকের ভবিষ্যৎত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনকি কতিপয় চিকিৎসক একই স্থানে বছরের পর বছর অবস্থান এবং স্থানীয় দুর্বৃত্তরা অধিকাংশ কেন্দ্রকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছে। দালালচক্রের আনাগোণা ও তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে রোগীরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া কেন্দ্রের চিকিৎসক ও কর্মচারীর অভাবও রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। সে কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছে রোগী ও তার স্বজনরা।জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর কার্যক্রম (এইচপিএসপি) কর্মসূচির আওতায় ৬ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাতশ’ ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামীণ পর্যায়ে প্রতি ছয় হাজার জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন সেবা দিতে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত জমিতে ক্লিনিকগুলো ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। ক্লিনিকের কার্যক্রম চালুর পর ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পর্যায়ক্রমে ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে পুনরুজ্জীবিত করা হলেও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এসব ক্লিনিকগুলোর সংস্কার কাজ না হওয়ায় বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। ২০১১ সালে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য সিএইচসিপি নিয়োগের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে। তবে এ ক্লিনিকগুলো সংস্কারের জন্য এর আগে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধ হলেও সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে নামে মাত্র সংস্কার করে বিল তুলে নেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পিরোজপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭ উপজেলা মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক পিরোজপুর সদর ১৫টি, নাজিরপুর ২৭টি, নেছারাবাদ ২৯টি, কাউখালী ১১টি, ভান্ডাড়িয়া ২০টি, ইন্দুরকানি ১১টি ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৩৭টি ক্লিনিক রয়েছে।সূত্র জানায়, গত আগষ্ট মাসে রোগী সেবাপ্রাপ্ত সংখ্যা ৯১ হাজার তিনশ’ ৪৮ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৮৪ হাজার আটশ’ ৩৫ জন।সরেজমিনে সদর উপজেলার উত্তর কদমতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২২ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। সেখানে থাকা দায়িত্বরত সিএইচসিপি সুমাইয়া তাব্বাসুম চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। জিয়ানগর উপজেলার খোলপটুয়া ক্লিনিক, জমাদ্দার হাট ক্লিনিক, কলারণ তালুকদার হাট ক্লিনিক এবং চাড়াখালি কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এসব ক্লিনিকের বাথরুম ও টিউবওয়েল দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় আশপাশের বাড়িতে গিয়ে প্রকৃতির কাজ সারতে হচ্ছে সিএইচসিপি ও ক্লিনিকে আগত রোগীদের। তাছাড়া এসব ক্লিনিকের ফ্লোর ও দেয়ালের আস্তর খসে পরাসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। দরজা জানালাগুলোতে জং (মরিচা) ধরে দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ভাঙাচুরা অবস্থায় রয়েছে ক্লিনিকের বিভিন্ন আসবাব। এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো সবগুলো ক্লিনিকে পৌঁছায়নি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় বিশেষ করে গ্রীষ্ম মৌসুমে কষ্ট করতে হচ্ছে সিএইচসিপিদের। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে এসব ক্লিনিকের ছাদ চুষে পানি পড়ায় ঔষধসহ সমস্ত আসবাব ভিজে নষ্ট হচ্ছে। ছাদ চুষে পানি পড়ার কারণে ক্লিনিকের ফ্লোর সবসময় স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় থাকায় রোগী ও সেবা প্রদানকারীদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়। ক্লিনিকগুলোর এ বেহাল অবস্থার কারণে এখানে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডেলিভারীর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। সিএইচসিপিরা ক্লিনিকের এসব দূর্দশার কথা অনেকদিন ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। যার কারণে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বরত সিএইচসিপিদের।অভিযোগ রয়েছে, ক্লিনিকগুলো তেমন কোন তদারকি ও কার্যক্রম না থাকায় এবং নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি দেখা দেয়ায় সেগুলোর ছাদ, দেয়াল ও মেঝের প্লাষ্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। ফলে ক্লিনিকগুলোতে পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ কর্মীরাও যাতায়াত সঠিকভাবে না করায় ক্লিনিকগুলো এক রকমের গোয়ালায় পরিণত হচ্ছে। এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকলেও দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ইনডোর চালু না হওয়ায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকই একমাত্র ভরসা। এ কারণে প্রতিদিন শতশত মানুষ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ক্লিনিকগুলোর এ বেহাল অবস্থার কারণে সিএইচসিপিদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে তারা এসব সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন।এ ব্যাপারে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. মুহা. ফখরুল আলম বলেন, যেসব কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে সেসব ক্লিনিকগুলোর দ্রুত সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। জেডএইচ/পিআর
Advertisement