বিদ্যুতের শহরে বাস করেও ঘোর অন্ধকার হয়ে আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি গ্রাম। এখনও গ্রামের ছেলে-মেয়েরা কুপি কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করে। বিদ্যুতের জন্য ৪০ বছর অপেক্ষার পর সম্প্রতি বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হয়েছে চরসোনারামপুর নামে চরের ওই গ্রামটিতে। কিন্তু খুঁটি বসানোর কয়েক মাসেও বিদ্যুতের দেখা পাননি গ্রামবাসী।
Advertisement
দেশে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরকারি-বেসরকারি ১১টি ইউনিট থেকে প্রতিদিন দেড় হাজারেরও বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএমএম সাজ্জাদুর রহমান।
দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হওয়ায় আশুগঞ্জকে বিদ্যুতের শহর হিসেবেই চেনেন সবাই। কিন্তু এই বিদ্যুতের শহরেই বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শতবছর আগে মেঘনা নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চরের গ্রাম চরসোনারামপুরে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। এই গ্রামে ৪০ বছর ধরে মানুষজন বসবাস করছেন। এখানকার অধিকাংশ মানুষই মেঘনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
Advertisement
চরের শিশুদের জন্য চরেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার আলোয় আলোকিত হলেও যুগের পর যুগ ধরে শুধুমাত্র বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে রয়ে গেছে গ্রামটি। এছাড়া বছর বছর নদীভাঙন চরের বাসিন্দাদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন চরসোনারামপুরের মানুষজন।
গরমকালে চরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনেকে গরম থেকে বাঁচতে বাড়ির আঙিনায় নানা গছা-পালা লাগিয়েছেন। অবশ্য বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে চরের বাসিন্দাদের কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। তবে সৌরবিদ্যুৎ নিয়েও দুর্ভোগের অন্ত নেই তাদের।
এদিকে গত ২৭ আগস্ট আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। তবে চরসোনামপুর গ্রামে এখনও বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি। গেল কয়েক মাস আগে বিদ্যুতের কিছু খুঁটি বসানো হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগ এখনও পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
অনীল চন্দ্র বর্মণ বলেন, এই গরমে আমরা যে কত কষ্ট করছি তা কেউ দেখে না। আমাদের কষ্টের কোনো সীমা নেই। আমাদের চরবাসীকে বিদ্যুৎ না দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে। ৪০ বছরের অপেক্ষার পর ছয় মাস আগে বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ আর দেয়নি।
Advertisement
চরসোনারামপুর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রজাপতি রাণী বর্মণ বলেন, ৪০ বছর আগে এই চরে এসে বসতি গড়েছি। তখন থেকেই শুনছি বিদ্যুৎ আসবে। ছেলে-মেয়েরা রাতে পড়তে বসলে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। কিন্তু হাতপাখা দিয়ে আর কতক্ষণ বাতাস করা যায়? টাকা-পয়সা নেই তাই সৌরবিদ্যুতও আনতে পারি না।
চরের বাসিন্দা প্রিয়া বালা জানান, গরমে আমাদের মরার দশা। সারারাত ঘুমাতে পারি না, নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকি। আমাদের এই কষ্ট কেউ দেখে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশুগঞ্জ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, চরসোনামারপুর গ্রামটি নদীর মাঝখানে হওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে সেখানে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে হবে। বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।
এফএ/এমএস