আন্তর্জাতিক

কবে আসছে মডার্নার ভ্যাকসিন?

বিশ্বের অনেক দেশেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে। বেশ কিছু দেশের ভ্যাকসিন ইতোমধ্যেই মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগও শুরু হয়েছে। মানবজাতিকে প্রাণঘাতী করোনা থেকে বাঁচাতে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

এখন পর্যন্ত যে কয়টি ভ্যাকসিন এগিয়ে আছে তার মধ্যে মডার্নার ভ্যাকসিন অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সঙ্গে যৌথভাবে দেশটির বায়োটেক কোম্পানি মডার্নার তৈরি করোনার সম্ভাব্য এই ভ্যাকসিন নিয়ে বেশ আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তার দেশ করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পারবে। নভেম্বরের ৩ তারিখ পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে বুধবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন ব্যানসেল জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনের জন্য মডার্নার ভ্যাকসিন এখনই আনা হবে না। তিনি বলেছেন, হয়তো নভেম্বরের ২৫ তারিখের আগে আসছে না মডার্নার ভ্যাকসিন।

Advertisement

মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারণার গতি বাড়াতেই বার বার ভ্যাকসিন আনার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু স্টিফেন ব্যানসেল বলছেন, নভেম্বরের ২৫ তারিখ হচ্ছে এমন একটি সময় যখন এই ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য তাদের হাতে থাকবে।

পরবর্তীতে এসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে পাঠানো হবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বরাবরই নির্বাচনের আগেই ভ্যাকসিন আনার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভ্যাকসিন উন্নয়নের কাজে ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু এতো তাড়াহুড়া করে ভ্যাকসিন আনার পক্ষপাতী নয় মডার্না। সেফটি ট্রায়াল শেষ হলেই ভ্যাকসিন আনার দিন ঘোষণা করবে প্রতিষ্ঠানটি। আর সেটা সম্ভবত ২৫ নভেম্বরের পরেই হবে।

সম্প্রতি মডার্না জানিয়েছে, তাদের এই ভ্যাকসিন তরুণদের দেহে যেমন কার্যকরী তেমনই একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বয়স্কদের ক্ষেত্রেও। বয়স্কদের দেহে এই ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে প্রাথমিক একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে তরুণদের দেহে এই ভ্যাকসিন যতটা নিরাপদ ঠিক ততটাই নিরাপদ বয়স্কদের দেহেও।

Advertisement

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ওই গবেষণার বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

সেখানে বয়স্কদের দেহে এই ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে আরও বেশি পরিপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। করোনায় বয়স্কদের নিয়ে আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। কারণ তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন এবং তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের মৃত্যুহারও বেশি।

আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ইভান এন্ডারসন বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। নতুন এই গবেষণা আমাদের অনেকটাই নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

মডার্নার প্রথম ধাপের পরীক্ষার বিস্তৃত ফলাফল এটি। প্রথম ধাপে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ৪০ জন বয়স্ক স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ২৫ মাইক্রোগ্রাম এবং ১০০ মাইক্রোগামের মডার্নার ভ্যাকসিনের দু'টি ডোজ প্রদান করা হয়।

প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫৬ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের এবং অপর ডোজটি প্রদান করা হয়েছে ৭১ বা তার বেশি বয়সীদের। এতে দেখা গেছে, ওই স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৫৬ থেকে ৭০ বা তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রেও।

টিটিএন