মরিচ ছাড়া আমরা কোনো তরকারি রান্না কল্পনাই করতে পারি না। শুধু আমাদের দেশে নয়, এটি বিশ্বের অনেকে দেশেই একটি জনপ্রিয় সবজি। অল্প পরিশ্রমে বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় মরিচ চাষ করতে পারেন। এটা চাষে খরচও অনেক কম। একটু রোদ আর সামান্য যত্নে দ্রুত বেড়ে ওঠে মরিচ গাছ।
Advertisement
স্থান নির্ধারণ আপনার বাসার বারান্দায় বা ছাদে এমন একটি স্থান বেছে নিন যেখানে আলো বাতাস আছে। মরিচ ছায়ায়ও ভালো হয়, তবে মাঝে মধ্যে রোদে দিতে হবে বা জানালার কাছে রাখতে হবে।
টব ছাদে অথবা বারান্দায় মরিচ চাষের ক্ষেত্রে মাটি অথবা প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করা উত্তম। এছাড়া পলিব্যাগ, টিনের কৌটা বা প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। মরিচ গাছের জন্য মাঝারি আকৃতির টব হলেই চলে। মাঝারি আকৃতির টবে চারটি মরিচ গাছের চাষ করা সম্ভব।
মাটি প্রস্তুত মরিচ চাষের জন্য দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এছাড়া সামান্য ক্ষারীয় মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। দোআঁশ মাটির সাথে জৈব সার ভালো করে মিশিয়ে টবভর্তি করুন। টবের এই মাটিতে যথেষ্ট পানি দিন, যাতে মাটি ভেজা ভেজা থাকে। এবং লক্ষ্য রাখুন মাটি যেন একেবারে শুকিয়ে না যায়। এবং আর্দ্র স্থানে রাখুন।
Advertisement
বীজ রোপণমরিচের বীজ বপন করার আগে বীজকে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সাধারণত মরিচ চাষের উপযুক্ত সময় হলো মে-জুন। এছাড়া শীতকালের শুরুতে অক্টোবর মাসেও মরিচের বীজ বপন করা যায়। এসময় বীজ বপন করলে মরিচের ভালো ফলন পাওয়া যায়।
বীজ বপনের ক্ষেত্রে টবের অথবা উপযুক্ত পাত্রের মাটিতে শুকনা বীজ ছড়িয়ে দিন বা বুনে দিন। কিছুদিন পরে দেখা যাবে বেশকিছু চারা গাছ গজিয়েছে। সেখান থেকে শক্তিশালী চারাগুলো রেখে বাকি চারাগুলো উপড়ে ফেলুন। শুকনো মরিচের ভেতরে যে বীজ থাকে সেগুলোও বের করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
পরিচর্যা প্লাস্টিকের কনটেইনার ব্যবহার করলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়ার জন্য আগেই কনটেইনারটিতে কয়েকটি ছোট ছিদ্র করে নিতে পারেন। মরিচ গাছের গোড়ায় দিনে একবার অবশ্যই পানি দেবেন। এবং সবসময় সঠিক নিয়মে পরিমাণ মতো পানি দিন। পানি দিলে অনেক সময় গাছ হেলে যেতে পারে; তাই গাছের গোড়ায় কোনো কাঠি বেঁধে দিন। গাছে পানি দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন পাতা যেন ভিজে না যায়। পাতা ভিজে গেলে রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। পানি জমে গাছ মারা যেতে পারে; তাই টবের থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন।
যখন মরিচের চারা বড় হয় সে সময়ে মাটিকে আর্দ্র রাখাটা খুবই জরুরি। যথেষ্ট আলো বাতাস ও পানির প্রয়োজন হয় মরিচ গাছ বাড়ার জন্য। এদের ছাদে, বারান্দা অথবা জানালার পাশের রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানটিতে রাখুন। খুব বেশি রোদ যেন না লাগে। সকাল অথবা বিকালে মরিচ গাছের যত্ন নিন।
Advertisement
মরিচের কচি চারার ডগা খাবার জন্য সমাগম হয় পিঁপড়ে এবং ছোট ছোট পাখির। এটা তাদের খুবই প্রিয় খাবার। তাই পিঁপড়া থেকে বাঁচার জন্য টবের চারপাশে কীটনাশক চকের দাগ দিয়ে রাখতে পারেন অথবা পাউডারজাতীয় কীটনাশক দিতে পারেন। এবং পাখির হাত থেকে বাঁচার জন্য শক্ত নেট ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পানিতে কয়েক ফোটা তরল সাবান মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে পারেন। অথবা পোকা মারা কীটনাশক ব্যবহার করুন।
ফসল তোলা মরিচ গাছে ফুল এলে দু-তিনদিন পরই ফুল ঝরে যাবে এবং ধীরে ধীরে মরিচ বড় হবে। এবং কিছুদিন পর থেকে মরিচ সংগ্রহ করতে পারেন। মরিচ বড় হলে টান দিয়ে না ছিড়ে কাঁচি দিয়ে সাবধানে কেটে নিন। তাহলে গাছের কোনো ক্ষতি হয় না এবং গাছ অধিক পরিমাণ ফলন দেয়। একটি মরিচ গাছ থেকে মোটামুটি দুই দফায় ভালো মরিচ পাওয়া যায়। ঝাল মরিচের একটি গাছে এক দফায় কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭৫টি করে, দুই দফায় ১০০ থেকে ১৫০টি মরিচ পাওয়া সম্ভব। যার ওজন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম।
বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণপাকা মরিচ ১৫ দিন পরপর সংগ্রহ করা যায়। মরিচ গাছ নির্বাচন করে পরিপূর্ণ পাকা মরিচ সংগ্রহ করতে হবে। তারপর তা ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে বীজ বের করে নিতে হবে। বীজ শুকিয়ে আর্দ্রতা ৬-৮ শতাংশ করে নিয়ে বায়ুরোধী পাত্র বা পলিথিন প্যাকেটে সংরক্ষণ করতে হবে।
মিজান/এসইউ/এএ/পিআর