একজন আলোকচিত্রীর কাজই ছবি ক্যামেরাবন্দি করা। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা না হোক একটি গল্প বলতে চান ছবির মাধ্যমে। আবার কখনো একটি মুহূর্ত বা ইতিহাস ফ্রেমে বন্দি করেন। একসময় সেই ছবিই হয়ে ওঠে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্প।
Advertisement
ছবির সূত্র ধরে উঠে আসে পুরোনো অনেক সত্য ঘটনা। কেননা আমরা যে ছবিগুলো দেখি, তা দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও এর পেছনের গল্পগুলো ভয়াবহ বা মর্মান্তিক হতে পারে। কখনো কখনো আমাদের শিহরিতও করে।
এমন কিছু ছবির পেছনের গল্পই শুনবো আজ-
বিস্ফোরণের আগে: ২০২০ সালের ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়। যেখানে বিপুল মানুষ আহত-নিহত হন। এমনকি কয়েক বিলিয়ন সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনার পর একজন ফটোগ্রাফারের ফোনে একটি ছবি পাওয়া যায়। যিনি এ বিস্ফোরণে নিহত হন। ছবিতে দেখা যায়, দমকলকর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে ছুটে আসছেন আগুনের খবর শোনার পর। ১০টি ফায়ার ব্রিগেডের ১টি ইউনিট আসে। যেখানে ৩টি দল ভেতরে প্রবেশ করে। বাকি ৭টি দল একদম আগুনের পাশ দিয়ে যেতে থাকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়।
Advertisement
ষাঁড়ের মাথার খুলি: ১৮০০ থেকে ১৯০০ সালে আমেরিকায় শিকারীরা বন্য ষাঁড় হত্যা করতে থাকে। এমনকি সে সময় ৩০ থেকে ৬০ মিলিয়ন প্রাণি হত্যা করা হয়েছিল। ১৮৭০ সালের মাঝামঝি একজন ফটোগ্রাফার বন্য ষাঁড়ের খুলি দিয়ে পাহাড়ের মতো বানানো একটি ছবি প্রকাশ করেন। যা দেখে আদিবাসীরা এ বন্য ষাঁড় রক্ষা করতে এগিয়ে আসে।
শ্রেণিকক্ষে আক্রমণ: ১৯৯৯ সালের ২০ এপ্রিল হ্যারিস এবং ক্লেবল্ড নামে দুই ব্যক্তি আমেরিকার একটি স্কুলে আক্রমণ করেছিলেন। এমনকি তারা বোমা স্থাপন করেছিলেন। তারা ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি। তবে তাদের গুলিতে ১২ শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষক নিহত হন। পরে একটি ছবিতে ওই দুজনের চেহারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই ছবির সূত্র ধরেই তাদের চিহ্নিত করা হয়। যদিও তারা আত্মহত্যা করেছিলেন।
মুক্তিপণ: ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ১৮ বছর বয়সী সামান্থা কেনিগকে তার কর্মস্থল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর সামান্থার ডেবিট কার্ড ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে, তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। তার দেহটি একটি শেডে রেখে খুনি দুই সপ্তাহের জন্য ঘুরতে যান। এরপর এসে সামান্থার দেহটি বের করে একটি ছবি তুলে তার বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন। ছবিটি প্রকাশের পর সামান্থার পরিবার পুলিশকে জানায়। তখন সামান্থার ডেবিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে খুনিকে ধরা হয়।
বাড়ির ছবি: ১৯৪৮ সালে ডেভিড চিম একটি ছবি তুলেছিলেন। যার ক্যাপশন ছিল, ‘বাচ্চাদের ক্ষতগুলো বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না’। যারা বছরের পর বছর দুঃখ পুষে রাখে। তাদের সুস্থ হতে কয়েক বছর বেশি সময় লাগে। যদি না সময়মতো তাদের যত্ন নেওয়া হয়। এ ছবির পেছনের গল্প হচ্ছে- একটি শিশু ৪ বছর বয়স থেকে কষ্ট আর অভিমান নিয়ে বেড়ে ওঠে তার আপন বাবার কাছে। তার শিক্ষক একটি বাড়ির ছবি আঁকতে বলেছিল। তাই সে এলোমেলো দাগিয়ে রাখে আর চোখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে।
Advertisement
এরকম অনেক গল্প আছে। একজন ফটোগ্রাফারের অনেক পরিশ্রমে ছবিটি ফ্রেমবন্দি হয়। যার পেছনে গল্প থাকে। সমাজের বিভিন্ন গল্প ফুটে ওঠে ছবির ভেতর। এমনকি ফটোগ্রাফার তার ছবির মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে চান।
সালমান/এসইউ/এএ/পিআর