করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের বিশেষ ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু নানা অজুহাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমন ২৫ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর নামমাত্র বা খুব কম বিতরণ করেছে এমন ২৫ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। উভয় চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই শতভাগ ঋণ বিতরণ করতে হবে। নইলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Advertisement
প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পাঁচ মাস পার হয়েছে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রকৃত উদ্যোক্তারা তহবিল সংকটে ব্যবসা করতে পারছে না। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে বারবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু নির্দেশনা আমলে না নেয়ায় এ পদক্ষেপ নিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শোকজ করা হয়েছে ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দুটি বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৭ বিদেশি ব্যাংককে। আর সতর্ক করা হয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং সরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংকে।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করে সরকার।
Advertisement
এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতের ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ সুবিধার ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই তহবিলের অর্থের যোগান দিতে ১০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঋণের সুদ ৯ শতাংশ হিসাব করা হলেও ঋণগ্রহীতাদের দিতে হবে ৪ শতাংশ সুদ। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সুদের অর্থ সরকার ভর্তুকি আকারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দেবে।
প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু সুবিধা নিলেও ঋণ বিতরণে অনীহা দেখাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ জমার হার (সিআরআর) দুই দফায় কমানো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার সুদহার অর্থাৎ রেপোর হার কমিয়ে নেয়া, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম সুদে তহবিল পাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩১ আগস্টভিত্তিক পরিসংখ্যান মতে, ছয়টি সরকারি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিতরণ করেছে মাত্র ৪১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বিতরণ করেছে ৯৭১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। অথচ এরই মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় এক ডজন ব্যাংক রয়েছে যারা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিতরণ করেছে।
Advertisement
আর দুটি বিদেশি ব্যাংক ছাড়া অপর সাতটি ব্যাংক এক টাকাও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। সবগুলো ব্যাংকের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বিতরণ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৪ শতাংশ।
এসআই/এনএফ/পিআর