শুধু ইবাদত নয়, বরং সৎ কর্মের মধ্যে অন্যতম ও প্রধান হলো নামাজ। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে ৫ বার নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজ তার প্রকৃত আদায়কারীর মনে যে অনুভূতি জাগিয়ে দেয়, তাহলো- হে নামাজি! তুমি মহান আল্লাহর গোলাম। তাঁর অনুগত বান্দা বা দাস ছাড়া তুমি কিছুই নয়। নামাজ না পড়ার কারণেই তুমি হবে জাহান্নামি!
Advertisement
মানুষের মনে জেগে উঠা এ অনুভূতিই দুনিয়ার সব অন্যায় কাজ থেকে আল্লাহর দিকে নিয়ে আসে। মানুষের মনে তৈরি হয় এক পবিত্র অনুভূতি। ফলে তা সব রকম অশ্লীল ও বেহায়াপনা থেকেও মুমিন বান্দাকে দূরে রাখে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ‘নিশ্চয়ই নামাজ সব অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)
যখনই মানুষের মনে এ অনুভূতি জাগ্রত হয় যে, মানুষ আল্লাহর গোলাম। আর আল্লাহর হুকুম মেনে চলাই মানুষের প্রধান কাজ। তখনই মানুষ গোনাহমুক্ত জীবনের দিকে ধাবিত হয়।
Advertisement
আর যদিও কোনো গোনাহ করে ফেলে তবে এ নামাজ মানুষকে সব গোনাহ থেকে পবিত্র করে তোলো। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি এভাবে উপমা দিয়ে তুলে ধরেছেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘তোমরা বল তো- যদি তোমাদের কারও বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে আর সে প্রতিদিন পাঁচ বার (ওই নদীতে) গোসল করে তবে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে?
জবাবে সবাই বলল, ‘না’, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যপারও ঠিক তাই। এর সাহায্যে মহান আল্লাহ তাআলা (নামাজি ব্যক্তির) গোনাহসমূহ ধুয়ে মুছে দেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
নামাজ শুধু শারীরিক ও আত্মিক ইবাদতই নয়, বরং নামাজ হলো দুনিয়ার সেরা আমলে সালেহ বা সৎকর্ম। যে সৎকর্ম করার প্রতি কুরআনুল কারিমে বার বার নির্দেশ এসেছে।
Advertisement
প্রশ্ন হতে পারে যে, নামাজ কীভাবে সেরা সৎকর্ম?
কুরআনুল কারিমের বর্ণনা থেকেই বিষয়টি সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে ঘোষণা করেন-- নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ তথা সৎ কর্ম করে…- তারা ব্যতিত, যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ তথা সৎকর্ম করে…
এভাবে অনেক আয়াতে প্রথমেই ঈমানের কথা বলা হয়েছে, তারপর আমলে সালেহ তথা সৎকর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে বুঝা যায় মুক্তি বা নাজাতের জন্য প্রথমে ঈমান আনা শর্ত তারপর আমলে সালেহ তথা সৎকর্ম করার নির্দেশ। তাহলে ঈমানের পর প্রথম ও প্রধান সৎকর্ম কোনটি? ইসলাম এ সম্পর্কে কী বলে?
এ প্রশ্নের জবাব কুরআনুল কারিমেই মহান আল্লাহ তুলে ধরেছেন-
’ইহা সেই কিতাব, যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যা মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক। (মুত্তাকি হলো)- যারা অদৃশ্যের প্রতি (আল্লাহকে না দেখে এবং পরকাল না দেখে) বিশ্বাস করে। আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩)
আবার হাদিসের আলোকেও প্রমাণিত যে, ঈমানের পর প্রথম ও প্রধান ইবাদত হলো নামাজ। কেননা ইসলামের প্রধান স্তম্ভ ৫টি। ধারাবাহিকভাবে প্রথমটি হলো- ঈমানের সাক্ষ্য। যার মাধ্যমে মানুষ ইসলামে প্রবেশ করে। তারপরের নির্দেশ হলো- নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর তাহলো সৎকাজ।
সুতরাং বুঝা গেল, ঈমান গ্রহণের পর দুনিয়ার সেরা সৎকর্ম হলো নামাজ। এ নামাজই মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে নিজেদের আল্লাহর গোলাম বা দাস হওয়ার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। কেননা কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বান্দার অনুভূতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে-
- ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; মহান আল্লাহ তাআলার জন্য।’ (সুরা আনআম : ১৬২ )
সুতরাং যারা নিজেদের আল্লাহর গোলাম বা দাস ভেবে নামাজ পড়বে, তাদের পুরষ্কারও ঘোষণা করেছেন তিনি। কুরআনে এসেছে-যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য নিশ্চিতভাবেই রয়েছে জান্নাতের বাগান; যার তলদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে ঝরণাধারা। এটিই বড় সাফল্য।’ (সুরা বুরুজ : আয়াত ১১)
এ আয়াতে প্রমাণিত মানুষ আল্লাহর দাস বা গোলাম। তার হুকুম বাস্তবায়নই শুধু মানুষের কাজ। সঠিক পথে চলার জন্য এ অনুভূতি এবং পুরষ্করের ঘোষণাই মানুষের সফলতার জন্য যথেষ্ট।
পক্ষান্তরে ভিন্ন আয়াতে নামাজ না পড়ার কারণে জাহান্নামের শাস্তির কথাও সুস্পষ্টভাবে কুরআনে উঠে এসেছে। কেননা নামাজ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সৎকর্ম। যারা আল্লাহর নির্দেশিত সেরা কাজ ‘নামাজ’ পড়বে না, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি তথা জাহান্নাম। কুরআনুল কারিমের বর্ণনায় বিষয়টি এভাবে উঠে এসেছে-
- ‘সেখানে জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে, কিসে তোমাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করল? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৪২-৪৩)
কুরআনুল কারিমের এ আয়াতগুলোর চিন্তা-ভাবনাই মানুষের বিবেকে নামাজের চূড়ান্ত অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। নামাজ পড়ার পাশাপাশি সঠিক পথে চলতে অনুপ্রেরণা দেয়।
সুতরাং নামাজ মুমিন মুসলমানকে প্রথমত আল্লাহর গোলামে পরিণত করে দেয়। অতপর জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে একাগ্রতার সঙ্গে তা আদায় করতে তৈরি করে তোলে। আর তখনই মানুষের এ নামাজ হয়ে যায় জীবন্ত নামাজ।
মানুষ যখন একাগ্রতার সঙ্গে জীবন্ত নামাজ আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, শয়তান তখনই মানুষের এ কাজে চক্রান্ত ও প্ররোচনা দিতে থাকে। একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহে শয়তানের শত বাঁধায়ও সফল হয়। কেননা মানুষের মনে তখন দুটি অনুভূতি কাজ করে-
এক : আমি মহান আল্লাহর গোলাম।দুই : নামাজ না পড়া, জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
আল্লাহ তাআলাও বান্দাকে নামাজে একাগ্রতা অবলম্বনের জন্য উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিতে থাকেন। কুরআনুল কারিমে এ বিষয়টিও আল্লাহ তাআলা মুমিনের গুণ হিসেবে তুলে ধরেছেন-
’অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম। যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও নম্র।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১-২)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহর গোলাম হয়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা। একাগ্রতার সঙ্গে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির চেয়ে সেরা সৎকর্মকারী আর কে হতে পারে?
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার একনিষ্ঠ গোলাম হওয়ার এবং জাহান্নামের ভয় জাগ্রত রেখে যথাযথভাবে একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনার উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর