জাতীয়

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ : কমেছে ৬৮ শতাংশ রোগী

বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যান। জলাতঙ্ক রোগটি মূলত কুকুরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়া বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমেও এ রোগ হতে পারে।

Advertisement

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের কামড় বা আচঁড়ের শিকার হয়ে থাকেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। এছাড়া প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশু এ রোগের শিকার হয়।

এমনই পরিস্থিতির মধ্যে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালন করছে।

জলাতঙ্ক একটি ভয়ঙ্কর মরণব্যাধি। এ রোগে মৃত্যুর হার শতভাগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা এখন প্রায় জলাতঙ্কমুক্ত এবং সকল কুকুর বাধ্যতামূলকভাবে টিকাপ্রাপ্ত।

Advertisement

দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপক হারে কুকুর টিকাদানের মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রায় নিয়ন্ত্রণে এনেছে। জলাতঙ্ক মূলত এখন আফ্রিকা ও এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা। বিশ্বের প্রায় ৯০ ভাগ জলাতঙ্কে মৃত্যু এখন দুটি মহাদেশে। শুধুমাত্র ভারতেই প্রায় ১৫-২০ হাজার লোক প্রতি বছর জলাতঙ্ক রোগের শিকার। পাকিস্তান, আফগানিস্তানেও এর প্রভাব বেশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশেও ২০১০ সালের আগে প্রতি বছর প্রায় ২০০০ মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। গবাদি প্রাণির মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান অজানা হলেও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এ রোগে মারা যেত।

২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন চলছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সকল জেলায় মোট ৬৭টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।

ঢাকা জেলার মহাখালীতে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র ‘সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল’। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে সারাদেশে ব্যাপক হারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রম চালু হয়েছে। এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম ও দিবস উদযাপনের মাধ্যমে অবহিতকরণ কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।

Advertisement

এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে কুকুর নিধন রোধের লক্ষ্যে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণের সঙ্গে সমঝোতার স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এছাড়া সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন এনজিও-এর সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার ফলে বাংলাদেশে জলাতঙ্কের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সারাদেশে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ১৪৭ থেকে এক হাজার ৪৪৫-এ নেমে এসেছে এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় প্রায় ৬৮ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমানে চলমান এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি কুকুরের কামড়ের আধুনিক ব্যবস্থাপনা চালু রেখে ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের সকল কুকুরকে তিন রাউন্ড টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

এমইউ/এমএআর/জেআইএম