শামুক কুড়ানোর কথা বলে কবিরাজ আমাদের দুজনকে নৌকায় তুলে নিয়ে যায়। এক জায়গায় গিয়ে নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে বলে আমার সঙ্গে ভূত আছে। আমি যা বলি তাই করবি। না হলে ভূতে ধরবে। এ কথা বলে আমাদের সঙ্গে খারাপ কাজ করার চেষ্টা করে। তখন আমরা চিৎকার করতে থাকলে আমাদের আবার বাড়ি নিয়ে আসেন।
Advertisement
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ি দক্ষিণপাড়া গ্রামের দুটি শিশুর একজন (৫ম শ্রেণির ছাত্রী) রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) এভাবেই সংবাদকর্মীদের কাছে তাদের সঙ্গে যৌন হয়রানির ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বিএলবাড়ি দক্ষিণপাড়া গ্রাম সংলগ্ন রউল বিলে এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গ্রাম্য প্রধানরা অভিযুক্ত করিবাজ রাকিবুল ইসলামকে (২৮) ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দেন। জরিমানা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন কবিরাজের স্ত্রী। তবে তাদের কাছে জোর করে টাকা আদায় করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এজন্য তার স্বামীকে প্রধানরা খুব মারধরও করেন বলে তিনি জানান।
অভিযুক্ত রাকিবুল বিএলবাড়ি মুজাহিদপাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি এখন বিএলবাড়ি দক্ষিণপাড়া গ্রামে মামা শ্বশুর বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করেন। তিনি এলাকায় কবিরাজি করেন। জ্বীন-ভূতের রোগীরও তিনি তদবির করেন বলে তার স্ত্রী স্বীকার করেন। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘রাকিবুল কবিরাজ’ বলে পরিচিত।
Advertisement
ধামাচাপা পড়া ঘটনাটির ব্যাপারে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বিএলবাড়ি দক্ষিণপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় যৌন হয়রানির শিকার দুই শিশু ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে। তাদের অভিভাবকরা জানান, শিশু দুটি দক্ষিণ বিএলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ছাত্রী।
গত ১০ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেলে নৌকায় চড়ে বিএলবাড়ি গ্রামের পাশে রউল বিল থেকে শামুক তোলার কথা বলে প্রতিবেশীর দুটি শিশুকে নিয়ে যান কথিত কবিরাজ রাকিবুল ইসলাম। বিলের এক জায়গায় সুযোগ বুঝে নৌকা ডুবিয়ে দেন রাকিবুল। এ সময় রাকিবুল বলেন, ভূত নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে। এ সময় ওই শিশুরা সাঁতরিয়ে একটি গাছ ধরে। এ সুযোগে কবিরাজ রাকিবুল দুটি শিশুর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় শিশু দুটি চিৎকার করতে থাকলে রাকিবুল তাদের ছেড়ে দেয়। এরপর বলে, তার শরীরের ভূত আছে। এ কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে ভয় দেখান তিনি।
৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি জানায়, সে বাড়ি এসে তার মামির কাছে প্রথমে এ কথা বলে। তাদের এক অভিভাবক বলেন, শিশু দুটি তো একেবারে ছোট নয়। তারা ভালো-মন্দ বোঝে। তাই বাড়ি এসে সব বলেছে। পরে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।
এদিকে ঘটনার দিনই (১০ সেপ্টেম্বর) এলাকার কয়েকজন গ্রাম প্রধান ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার রাজু আহমেদ এর বাড়িতে একটি সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে ইউপি সদস্য রাজু আহমেদসহ এলাকার কয়েকজন গ্রাম প্রধান অভিযুক্তকে মারধর করেন। এরপর তার কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেন।
Advertisement
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাজু আহমেদ সালিশ বৈঠকের কথা অস্বীকার করেন। তবে অভিযুক্ত রাকিবুল কবিরাজ পলাতক থাকার কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার স্ত্রী এসব ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, তার স্বামী মারও খেলো আবার টাকাও গেল। এ বিষয়ে বিএলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না।
স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, এলাকার প্রভাবশালীদের চাপে মুখ খুলতে পারেননি এই দুই শিশুর পরিবার। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও গুঞ্জন চলছে বলে তারা জানান।
এ ব্যাপারে পাবনার ফরিদপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, তার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
এমএএস/পিআর