গাজীপুরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চলছে অবহেলা আর অযত্নে। এ ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় চিকিৎসকের জন্য। আবার চিকিৎসক আসলেও অপেক্ষা করতে হয় ওষুধের জন্য। এমনকি নির্দিষ্ট সময় ক্লিনিকে আসছেন না দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রোগীরা চিকিৎসা না নিয়েই ফেরত যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কাগজে-কলমে সপ্তাহের ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব ক্লিনিক খোলা রেখে তৃণমূলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, ওষুধ ও পরামর্শ দেয়ার সরকারি বিধান থাকলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অধিকাংশ ক্লিনিকেই সময় মতো দায়িত্বপ্রাপ্তরা আসেন না। কিংবা আসলেও দুপুর ১২টার পর সেখানে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়াও রয়েছে ওষুধ সংকট। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে রোগীরা এসব ক্লিনিক থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না।জানা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সরকারিভাবে ৩০ প্রকারের বিভিন্ন ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করার নির্দেশনা রয়েছে। সপ্তাহের ৬ দিন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, সপ্তাহের ৩ দিন একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী দায়িত্ব পালন করার কথা। এছাড়াও কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সপ্তাহে একদিন ১ জন মেডিকেল অফিসার এসব কেন্দ্র পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্লিনিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অনেকেই ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে বাসা-বাড়িতে ব্যস্ত থাকায় সময় মতো কর্মস্থলে আসেন না। এমনকি যারা সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে, জেলা কিংবা উপজেলা সদরে অবস্থান করেন তাদের ক্ষেত্রে কর্মস্থলে নিয়মিত না আসার প্রবণতা আরো ভয়াবহ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোপাইডার জানান, তারা সময় মতো সপ্তাহের ৬ দিনই কর্মস্থলে আসলেও স্বাস্থ্য সহকারী এবং পরিবার কল্যাণ সহকারীরা ৩ দিন কর্মস্থলে আসেন না। বিশেষ করে পরিবার কল্যাণ সহকারীরা নিয়মিত কেন্দ্রে না আসায় নারী রোগীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সরকারি নির্দেশনা থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারদের অনেকেই কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে যান না। অপরদিকে বিভিন্ন ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারও নিয়মিত ক্লিনিকে যান না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়ভাবে এ সকল ক্লিনিক পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন হলেও বিভিন্ন স্থানে কমিটির কর্মকর্তারা ক্লিনিকের কোনো খোঁজ খবরই রাখেন না। সরেজমিনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন দিঘিরচালা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটি তখনও খোলা হয়নি। পাশে এক বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এখানকার কর্মকর্তারা কে কখন আসে তার ঠিক নাই। অনেক সময় রোগীরা ক্লিনিকে এসে চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী হোসনে আরা এসে চাবি খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এখানকার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নীলা আক্তার ছুটিতে আছেন। তার আসতে একটি দেরি হয়ে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আসেন সহকারী হেলথ ইন্সপেক্টর মজিবুর রহমান। ক্লিনিকের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় ময়লা আবর্জনায় ঠাসা। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। স্থানীয়রা জানায়, এখানে চিকিৎসা নিতে এলে রোগীদের থেকে ৫ টাকা করে নেয়া হয়। এ অর্থ দিয়ে ক্লিনিক পরিষ্কারসহ কিছু কাজ করা হয়।ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা গার্মেন্টস কর্মী সালমা আক্তার জাগো নিউজকে জানান, ছেলের জ্বর নিয়ে তিনি দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আলেয়া বেগম জানান, তিনি মূলত ওষুধের দোকানে যাচ্ছেন পেটের পীড়ার ওষুধ কিনতে। তাই যাওয়ার পথে তিনি দেখে যাচ্ছেন কমিউনিটি ক্লিনিকটি খোলা আছে কিনা। এটি বন্ধ দেখে তিনি ওষুধের দোকানেই গেলেন।ভোগড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী স্থানীয় শাহিনা আক্তার জানান, দুদিন ঘুরে বৃহস্পতিবার ক্লিনিকের ডাক্তারের খোঁজ পান। কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যে সেবা দেয়া হচ্ছে তা অন্যান্য জেলার তুলনায় ভাল। এসব ক্লিনিকে ওষুধের সংকট নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত তদারকি করা হয়। তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসএস/আরআইপি
Advertisement