সানাউল্লাহ্ আল ফাহাদ
Advertisement
করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে কালের সাক্ষী পুরান ঢাকার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কে দীর্ঘদিন মানুষের পদচারণা ছিল না। বহুদিন ধরে এই পার্ক যেন খাঁ খাঁ করছিল। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষ কিছুটা মানিয়ে নিতে শুরু করায় বাহাদুর শাহ পার্ক যেন তার স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে। আগের মতো সকাল-সন্ধ্যা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকছে পার্কের পরিবেশ।
পার্কটি ঘুরে দেখা যায়, সাধারণত বয়স্করা প্রাতভ্রমণে এলেও বিকেলে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বাহাদুর শাহ পার্ক। কাউকে বিস্তৃত ওয়াকওয়েতে হাঁটতে দেখা যায়, কাউকে নতুন বানানো বেঞ্চে বসে সময় কাটাতে দেখা যায়। অনেককে আবার বন্ধুদের নিয়ে খোশগল্পে মেতে উঠতে দেখা যায়। আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও আড্ডার অন্যতম কেন্দ্র এ পার্ক।
বাহাদুর শাহ পার্কের অবস্থান ঢাকার প্রধান নৌবন্দর সদরঘাট এলাকায় ঢুকতে লক্ষ্মীবাজারের ঠিক সম্মুখে। পার্কটিকে ঘিরে সাতটি রাস্তা একত্রিত হয়েছে। এর চারপাশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বেশ কিছু স্কুল-কলেজ থাকার কারণে এটি পুরান ঢাকার একটি অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিসেবে বিবেচিত।
Advertisement
জানা যায়, প্রথমে এ ময়দানের নাম ছিল ‘আন্টাঘর’। ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল এই ময়দানে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ঢাকার নবাব আব্দুল গনি ও নবাব আহসান উল্লাহ। ১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণের পর এ ময়দানের নামকরণ হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’।
১৯৫৭ সালে (মতান্তরে ১৯৬১) সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ময়দানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাহদুর শাহ পার্ক’। সেই থেকে এ নামে পরিচিত জায়গাটি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতোপূর্বে পার্কটি নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি নিরাপত্তাহীনতায় ছিল। এতে মানুষের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা খুব একটা ছিল না। রাতে ছিল মাদকসেবীদের আড্ডা। তবে পার্কটির উন্নয়ন ও সংস্কার হওয়ায় ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা পেয়েছে। একইভাবে মানুষ এটি সঠিকভাবে ব্যবহারের অধিকার ফিরে পেয়েছে। সংস্করণ করায় বেড়েছে এর সৌন্দর্য। সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় বলে সব বয়সী মানুষ আগ্রহভরে আসে পার্কটিতে।
পার্কে আসা দর্শনার্থীদের জন্য উত্তর-পূর্ব কোণে একটি আধুনিক পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এতে প্রতিবন্ধীসহ নারী ও পুরুষের জন্য আছে বিশেষ চেম্বার। পার্কটি দেখাশোনার জন্য থাকে পুলিশও। ফলে সুযোগ নেই মাদকসেবীদের আড্ডার।
Advertisement
এখানে স্থানীয়ভাবে প্রাতভ্রমণকারী সংঘ গড়ে তোলা হয়েছে। এ সংঘের সদস্যরা ভোরে ও বিকেলে হাঁটেন পার্কটিতে। ঢাকায় ঘুরতে এলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একবার বেড়িয়ে যান কালের সাক্ষী এ পার্কে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
এইচএ/জেআইএম